Skip to main content

শার্ল মর্টেল থেকে ব্রান্ডন ট্যারন্ট ১৩শ বছরের থেকে যাওয়া চেতনা!!!

শার্ল মর্টেল থেকে ব্রান্ডন ট্যারন্ট
১৩শ বছরের থেকে যাওয়া চেতনা!
টুরস। এক ঐতিহাসিক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের নাম। ইসলামি ইতিহাসে এটি 'বালাতুশ শুহাদা' যুদ্ধ নামে পরিচিত। বর্তমানে এটি ফ্রান্সে অবস্থিত। ১১৪ হিজরির পবিত্র রমজানুল মুবারক, ৭৩২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ অক্টোবর, রোজ শনিবার এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুসলিম বাহিনীর সৈন্যসংখ্যা ছিল ৫০ হাজার। খ্রিষ্টান বাহিনী ছিল চারলাখ! মুসলিমদের সেনাপতি ছিলেন আন্দালুসের উমাইয়া গভর্নর, ইসলামি ইতিহাসের অমিততেজা বীর আবদুর রহমান আল গাফিকি। খ্রিষ্টানদের সেনাপতি ছিলেন শার্ল মর্টেল। আরবিতে 'বালাত' অর্থ প্রাসাদ। 'শুহাদা' শব্দটি 'শহিদ' এর বহুবচন। এ যুদ্ধে মুসলমানদের এত লাশ পড়েছিল যে, এগুলোকে একত্রিত করলে একটি প্রাসাদ হয়ে যেত! কারও কারও মতে, সে প্রান্তরে একটি পাকা রাস্তা ছিল বলে, এ-কে বালাতুশ শুহাদা যুদ্ধ বলা হয়।
চার্লসের পর্বতসম বাহিনীর কিছু ছিল ঘোড়সওয়ার আর কিছু ছিল পদাতিক। এদের শরীরে ছিল নেকড়ের পোশাক। ঘাড় পর্যন্ত লম্বিত চুল। যা জট পাকানো ছিল। এদের ভাবমূর্তি দেখলেই পিলে চমকে যাবার মতো ছিল! চার্লস লয়ার নদী পার হয়ে, নদীকে পেছনে রেখে অবস্থান নিলেন। যুদ্ধের প্রথম আটদিন উভয়পক্ষে হালকা সংঘর্ষ হয়। এতে মুসলমানদের পাল্লা ভারি ছিল। কিন্তু নবম দিনে সংঘটিত হয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। দিনভর যুদ্ধ চলে। অবশেষে রাতের আঁধার নেমে এল। এবারও মুসলমানদের পাল্লা ভারি ছিল। দু'পক্ষ পৃথক হয়ে গেল। আরও একটু সময় যুদ্ধ স্থায়ী হলে মুসলমানরাই জেতার সমূহ সম্ভাবনা ছিল।
পরদিন শনিবার। যুদ্ধের দশম দিন। আবারও যুদ্ধ শুরু হলো। বিজয় মুসলমানদের পদচুম্বন করতে যাবে, ঠিক তখনই শোরগোল উঠল যে, গনিমতের মালসহ মুসলমানদের সেনাছাউনি বিপদের সম্মুখীন! দুশমনেরা সেখানে হামলা করেছে! এতে দুর্বলচিত্তের বার্বারি মুসলিম সেনারা গনিমতের মাল রক্ষার্থে ময়দান ছেড়ে ছাউনি অভিমুখে ছুটল। মুসলিম বাহিনীর মধ্যে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়ে গেল। আবদুর রহমান আল-গাফিকি সেনাদের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সব প্রচেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এতক্ষণে মুসলিম বাহিনীর অবস্থা একেবারে শোচনীয় আকার ধারণ করেছে। বীরের মতো লড়াই করে যেতে লাগলেন গাফিকি। তবুও অস্ত্র সমর্পণ করতে রাজি নন তিনি। হঠাৎ করে শাঁ করে এসে দুশমনের একটা তীর তাঁর গায়ে বিদ্ধ হয়। ঘোড়ার পিঠ থেকে তিনি ছিটকে পড়েন। সেখানেই শাহাদাত বরণ করেন।
দুটি বিপদের সম্মুখীন হয় মুসলিম বাহিনী। এক. নিজেদের বিশৃঙ্খলা। দুই.সেনাপতির শাহাদাত। ব্যস, তাদের মনোবল ভেঙে যায়। এই সুযোগে খ্রিষ্টান বাহিনী হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে। মুসলমানদের লাশের পর লাশ ফেলে সামনে এগোতে থাকে। তবে এত বিপদের মধ্যেও কিছু দৃঢ়চিত্তের মুজাহিদ নিজেদের তরবারির নৈপুণ্য দেখান। চরম বিপদের মুহূর্তেও মুসলমানদের বাহুবল কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারে খ্রিষ্টানরা। একসময় রাতের অন্ধকার নেমে আসে। উভয়পক্ষ ছাউনিতে ফিরে যায়।
মুসলিম বাহিনী ছাউনিতে পৌঁছে একে অন্যের ওপর দোষারোপ করতে লাগল। এমনকি একে অন্যের দিকে হাতিয়ার পর্যন্ত উঠিয়ে নিল! ফরাসিদের ওপর এখন বিজয়ের আশা সম্পূর্ণ দুরাশায় পরিণত হলো। এখন নিরাপদে সরে পড়াই একমাত্র বিকল্প রাস্তা। তাই সে রাতের অাঁধারেই মুসলিম বাহিনী সেপটিমানিয়ার দিকে পথ ধরল।
সকাল হলে মুসলিম ছাউনিতে সব চুপচাপ দেখে চার্লস ও তার মিত্র ইউডিস মুসলমানদের কোনো নতুন কৌশল মনে করে সন্দিহান হয়ে পড়লেন। তারা সন্তর্পণে জানতে পারলেন যে, মুসলিম বাহিনী সরে গেছে, আর কিছু আহত সাথিদের ফেলে রেখে গেছে সেখানে। কালবিলম্ব না করে তারা মুসলিম বাহিনীর ছাউনিতে পৌঁছে আহত সেনাদের হত্যা করে ছাড়ে। এভাবেই সমাপ্তি ঘটে বালাতুশ শুহাদা যুদ্ধের!
ফ্রান্সের কলিজায় সংঘটিত 'টুরস' বা 'বালাতুশ শুহাদা' যুদ্ধে অত্যন্ত শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় আন্দালুসের আরব ও বার্বারি মুসলিম বাহিনী। কিন্তু সে যুদ্ধে মুসলমানরা জিতলে কী হতো? জানেন না? তাহলে শুনুন-
বালাতুশ শুহাদা যুদ্ধে মুসলমানরা জিতলে আজ ইউরোপের ইতিহাস ভিন্নভাবে রচিত হতো। ইউরোপিয়ান ঐতিহাসিক গিবন ও লেনপুলদের মতে, সে যুদ্ধে মুসলমানরা জিতলে প্যারিস ও লন্ডনে, ক্যাথলিক গির্জার পরিবর্তে গড়ে উঠত মসজিদ। অক্সফোর্ড ও অন্যান্য শিক্ষাকেন্দ্রে বাইবেলের পরিবর্তে শোনা যেত কুরআনের বাণী!
পুনশ্চ: আজকের সন্ত্রাসী হামলায় ব্যবহৃত রিভলভারের গায়ে লেখাগুলোর মধ্যে 'টুরস ৭৩২' লেখা আছে দেখুন। ১৩শ বছর আগের বালাতুশ শুহাদার চেতনা আমরা লালন করতে না পারলেও তারা টুরসের চেতনা ঠিকই লালন করেছে! ১৩শ বছর আগের শার্ল মর্টেলের চেতনা নিয়ে ব্রান্ডন ট্যারন্টরা উজ্জীবিত থাকলেও, আবদুর রহমান গাফিকির চেতনায় উজ্জীবিত হবার কেউ নেই!
---------
সূত্রাবলি:
১- ﻓﺠﺮ ﺍﻷﻧﺪﻟﺲ -২২৭, ড. হুসাইন মুআন্নিস
২- ﺍﻟﺘﺎﺭﻳﺦ ﺍﻷﻧﺪﻟﺴﻲ -১৯৭, ড. আবদুর রহমান আল-হাজি
৩- ﺑﻼﻁ ﺍﻟﺸﻬﺪﺍﺀ -৪৪, শাওকি আবু খলিল

Comments

Popular posts from this blog

বিষয় ভিত্তিক আয়াত-হাদিসঃ মুমিনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য - দাওয়াত - সংগঠন - প্রশিক্ষণ - ইসলামী শিক্ষা - ইসলামী বিপ্লব

বিষয় ভিত্তিক আয়াত-হাদিসঃ মুমিনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য - দাওয়াত - সংগঠন - প্রশিক্ষণ - ইসলামী শিক্ষা - ইসলামী বিপ্লব মুমিনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কুরআন انى وجهت وجهى للذي فطر السموات والارض حنيفا وما انا من المشركين ـ (انعام ـ 79) উচ্চারণ: : ইন্নী ওয়াজজাহাতু ওয়াজহিইয়া লিল্লাযী ফাতরাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানীফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকীন। (১) আমি তো একমুখী হয়ে নিজের লক্ষ্য সেই মহান সত্তার দিকে কেন্দ্রীভূত করছি যিনি যমীন ও আসমানসমূহকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি কনিকালেও মুশরিকদের মধ্যে শামিল নই। (সূরা আনয়াম: ৭৯) قل ان صلاتى ونسكى ومحياي ومماتى لله رب العلمين ـ (انعام :162) উচ্চারণ: : কুল ইন্না ছালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়াইয়া ওযা মামাতী লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন। (২) বল, আমার নামায, আমার যাবতীয় ইবাদত, আমরা জীবন ও মৃত্যু সবকিছুই সারা জাহানের রব আল্লাহরই জন্য। (সূরা আনয়াম: ১৬২) وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون ـ (ذارية ـ 56) উচ্চারণ: : ওয়া মা খলাকতুল জিন্না ওয়াল ইনসা ইল্লা লিইয়া’বুদূন। (৩) আমি জ্বিন ও মানুষকে অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি, কেবল এজন্য সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার বন্

মনে রাখার সহজ কৌশলে Exclusive টেকনিকে আর্ন্তজাতিক বিষয়াবলী সাধারন জ্ঞান। আশা করি মনোযোগ দিয়ে একবার পড়লেই মনে থাকবে।

মনে রাখার সহজ কৌশলে Exclusive টেকনিকে আর্ন্তজাতিক বিষয়াবলী সাধারন জ্ঞান। আশা করি মনোযোগ দিয়ে একবার পড়লেই মনে থাকবে। SAARC এর সদস্যঃ Exclusive টেকনিকঃ NIPA MBBS পড়তে আগ্রহী। NIPA = নেপাল, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্থান। MBBS= মালদীপ, বাংলাদেশ, ভুটান, শ্রীলংকা। ECO – ভুক্ত শর্টকাট মনে রাখার নিয়মঃ Exclusive টেকনিকঃ আইতু + ৭ স্তান। =আজারবাইজান, ইরান, তুরস্ক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, কাজাখস্তান, কিনঘিজিস্তান, তুর্কিমেনিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান। D-8 ভুক্ত শর্টকাট মনে রাখার নিয়মঃ Exclusive টেকনিকঃ বাপ মা নাই তুমিই সব। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালয়শিয়া, নাইজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, মিসর, ইরান। ASEAN এর সদস্যঃ Exclusive টেকনিকঃ MTV তে FILM দেখলে BCS হবে না। Mayanmar, Thailand, Vietnam, Phillipines, Indonesia, Laos, Malaysia, Brunei, Cambodia, Singapore. Super Seven এর সদস্যঃ Exclusive টেকনিকঃ থামাই+ সিতাদহ থাইল্যান্ড, মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিংগাপুর, তাইওয়ান, দঃ কোরিয়া, হংকং। থাইল্যান্ড, মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া + FOUR TIGERS. Scandinavian States এর সদস্যঃ Exclusive টেকন

সাইয়েদ কুতুব শহীদের জীবনী

ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপুরুষ সাইয়েদ কুতুব শহীদ জন্ম ও শিক্ষাজীবন সাইয়েদ কুতুবের মূল নাম হলো সাইয়েদ ; কুতুব তার বংশীয় উপাধি। তার পূর্বপুরুষরা আরব উপদ্বীপ থেকে এসে মিসরের উত্তরাঞ্চলে বসবাস শুরু করেন। তার পিতার নাম হাজী ইবরাহীম কুতুব। তিনি চাষাবাদ করতেন। তার মাতার নাম ফাতিমা হোসাইন উসমান , যিনি অত্যন্ত ধার্মিক মহিলা ছিলেন। তারা মোট দুই ভাই এবং তিন বোন ছিলেন। ভাইরা হলেন সাইয়েদ কুতুব এবং মুহাম্মাদ কুতুব। আর বোনেরা হলেন হামিদা কুতুব এবং আমিনা কুতুব। পঞ্চম বোনের নাম জানা যায়নি। সাইয়েদ কুতুব ছিলেন সবার বড়। তারা সব ভাই-বোনই উচ্চশিক্ষা লাভ করেন এবং ইসলামী আন্দোলনের জন্য প্রভূত ত্যাগ স্বীকার করেন। সাইয়েদ কুতুব ১৯০৬ সালে মিসরের উসইউত জিলার মুশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার আম্মা ফাতিমা হোসাইন উসমান অত্যন্ত দ্বীনদার ও আল্লাহভীরু মহিলা ছিলেন। সাইয়েদের পিতা হাজী ইবরাহীম চাষাবাদ করতেন কিন্তু তিনিও ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ও চরিত্রবান। কর্মজীবন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাইয়েদ কুতুবের শিক্ষা শুরু হয়। মায়ের ইচ্ছানুসারে তিনি শৈশবেই কোরআন হেফয করেন। পরবর্তীকালে তার পিতা কায়রো