Skip to main content

২৮ অক্টোবর চির অমলিন স্মৃতিজাগানিয়া হৃৎকম্পন

২৮ অক্টোবর ২০০৬ বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম কালো দিবস। দিনটি জাতির জীবনে এক রক্তভেজা ইতিহাসের জন্ম দেয়। এই ইতিহাস এতই বেদনার যে তা কখনো ভুলবার নয়, মুছবারও নয়; বরং চির অমলিন এক স্মৃতিজাগানিয়া হৃৎকম্পন! বিশ্বের ইতিহাসে মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকটি। হিটলার, মুসোলিনী ও স্টালিনরা হত্যা করেছিল লক্ষ লক্ষ মানুষ। এসব নৃশংস হত্যার পরিসংখ্যান হয়তো পাওয়া যাবে না। কিন্তু ২৮ অক্টোবর ঢাকার পল্টন ময়দানের ঘটনা প্রত্যক্ষ করলে নিঃসন্দেহে হিটলাররা লজ্জিত হতো। কারণ তারা মানুষ হত্যার পর লাশের ওপর উঠে “নৃত্যোল্যাস” করার মতো পাশবিকতা প্রদর্শন করেননি। অথচ ২৮ অক্টোবর ২০০৬ বাংলাদেশে কী ঘটেছিল তা দেশীয় মিডিয়ার মাধ্যমে দেশের প্রতিটি মানুষ যেমন প্রত্যক্ষ করেছিল তেমনি আন্তর্জাতিক মিডিয়ার কল্যাণে সমগ্র বিশ্বও তা অবলোকন করেছিল। সেদিন স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল পৃথিবীর মানুষ। আর নিদারুণভাবে কলঙ্কিত হয়েছিল মানবতা। শুধুমাত্র রাজনৈতিক মত পার্থক্যকে কেন্দ্র করে এমন পাশবিক কায়দায় মানুষ হত্যার দৃশ্য এর আগে কখনো কোথাও দেখা যায়নি।
বছর ঘুরে বার বারই দিনটি ফিরে ফিরে আসে। আর আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি। কিন্তু আমরা ব্যর্থ হই, কিংবা চাই না সফলতার সাক্ষর রাখতে। তাইতো আজও ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য চলছে হীন চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র। নিজেদের অধীনে একটা যেন তেন নির্বাচন করে চিরদিন ক্ষমতায় থাকার পথটি সুগম করতে এমন কোনো নিকৃষ্ট পথ ও পন্থা নেই যা ২০০৮ সালের মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে দেশের ক্ষমতার মসনদে চেপে বসা গোষ্ঠীটি অবলম্বন করছে না। নজিবিহীনভাবে দেশের বিচারব্যবস্থাকে দলীয়করণ করে এখন সেখানে বিচারের নামে প্রহসন চালিয়ে বিরোধী মত দমনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দিয়ে বিরোধী কণ্ঠ রোধ করতে চাচ্ছে। দেশকে ক্রমান্বয়ে সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দেশী-বিদেশী কোনো আবেদন-নিবেদনে তারা সাড়া দিচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশে কালো মেঘের চাদরটা আরো চেপে বসছে।
অফুরন্ত সম্ভাবনার দেশ এই বাংলাদেশ। একদিকে যেমন রয়েছে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, অপরদিকে রয়েছে এক বিশাল মানবসম্পদ। যাকে ইচ্ছা করলে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের স্বচ্ছতা ও কর্ম-উদ্দীপনার মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সম্ভব। কাজেই এসব বিবেচনায় বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে। সরকারকে অনুধাবন করতে হবে, জনগণ যদি জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ, আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তায় ভোগে তাহলে মানুষের কাছে তারা আরও অপ্রিয় হয়ে উঠবে। তাদের সব সম্ভাবনা ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। নিঃসন্দেহে বলা যায়, দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অব্যাহত রাখার বিষয়টি অনেকাংশে সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। সেই সঙ্গে পক্ষপাতহীন নির্বাচন ব্যবস্থা করলে জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি দেশও এক অনিবার্য সঙ্ঘাত বা বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে, দেশে গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক শাসন ব্যবস্থা ব্যাহত হবে। তা ছাড়া এ বিষয়ে তথা নির্বাচন পদ্ধতি ও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য উভয় দলকে সহযোগিতার মনোভাব পোষণ করে সমঝোতার মাধ্যমে একটা পরিপূর্ণ-স্থায়ী ব্যবস্থার দিকে যেতে হবে। জনগণ সে প্রত্যাশাই করে।
একে অপরকে দোষারোপ নয়; গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো আলাপ-আলোচনা, সংলাপ, একে অন্যের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া, জনকল্যাণমূলক মতামতকে গুরুত্ব দেয়া। বিরোধী দলকে দমন-পীড়ন, গুম-হত্যা, নির্যাতন, জনতার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে লেলিয়ে দেয়া নয়; বরং নৈরাজ্যকর, অস্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা থেকে সহনশীল, সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ চর্চার লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা। সবাইকে বুঝতে হবে, ব্যক্তির চেয়ে দল বড় আর দলের চেয়ে দেশ বড়। দেশকেই সবার উপরে স্থান দিয়ে দল-মত-নির্বিশেষে সহাবস্থানের মাধ্যমে ঐক্যের রাজনীতি গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।

Comments

Popular posts from this blog

বিষয় ভিত্তিক আয়াত-হাদিসঃ মুমিনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য - দাওয়াত - সংগঠন - প্রশিক্ষণ - ইসলামী শিক্ষা - ইসলামী বিপ্লব

বিষয় ভিত্তিক আয়াত-হাদিসঃ মুমিনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য - দাওয়াত - সংগঠন - প্রশিক্ষণ - ইসলামী শিক্ষা - ইসলামী বিপ্লব মুমিনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কুরআন انى وجهت وجهى للذي فطر السموات والارض حنيفا وما انا من المشركين ـ (انعام ـ 79) উচ্চারণ: : ইন্নী ওয়াজজাহাতু ওয়াজহিইয়া লিল্লাযী ফাতরাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানীফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকীন। (১) আমি তো একমুখী হয়ে নিজের লক্ষ্য সেই মহান সত্তার দিকে কেন্দ্রীভূত করছি যিনি যমীন ও আসমানসমূহকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি কনিকালেও মুশরিকদের মধ্যে শামিল নই। (সূরা আনয়াম: ৭৯) قل ان صلاتى ونسكى ومحياي ومماتى لله رب العلمين ـ (انعام :162) উচ্চারণ: : কুল ইন্না ছালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়াইয়া ওযা মামাতী লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন। (২) বল, আমার নামায, আমার যাবতীয় ইবাদত, আমরা জীবন ও মৃত্যু সবকিছুই সারা জাহানের রব আল্লাহরই জন্য। (সূরা আনয়াম: ১৬২) وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون ـ (ذارية ـ 56) উচ্চারণ: : ওয়া মা খলাকতুল জিন্না ওয়াল ইনসা ইল্লা লিইয়া’বুদূন। (৩) আমি জ্বিন ও মানুষকে অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি, কেবল এজন্য সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার বন্

আল-আইয়্যামে ড. ত্বহা হুসায়নের শৈশব জীবন চিত্র

আল-আইয়্যামে ড. ত্বহা হুসায়নের শৈশব জীবন   চিত্র আরবী সাহিত্য জগতে উনিশ শতকের শেষার্ধে মিশরে ডঃ ত্বহা হুসায়নের আবির্ভাব ঘটে ; সে সময় অনুকরণের উষ্ণ হাওয়া বইছিল। নানা প্রকার কুসংস্কারে নিপতিত , বৈদেশিক শাসনের যাতাকলে নিষ্পেষিত , ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য ও বাক স্বাধীনতা , রাজনৈতিক অধিকার , অর্থনৈতিক মূল্যবোধ , মানবিক অধিকার ও সামাজিক মর্যাদা থেকে জাতি বঞ্চিত অবহেলিত , ঠিক তখন এ লাঞ্ছিত , উৎপীড়িত দিশেহারা জাতিকে পথ নির্দেশনার জন্যই ছিল তাঁর সাহিত্যকর্ম । তাঁর ক্ষুরধার লিখনীতে তন্দ্রাচ্ছন্ন জাতির সুপ্তপ্রাণে বিপ্লবের জোয়ার এসেছিল। তিনি ছিলেন একাধারে শিক্ষাবিদ , সংস্কারক , গবেষক , ঐতিহাসিক , বিজ্ঞানধর্মী সমালোচক , প্রভাবশালী বাগ্নী , সর্বোপরি আধুনিক মিশর ও আধুনিক আরবী সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা।১ The New Encyclopaedia Britannica তে বলা হয়েছে “Taha Hussain, was an outstanding Figure of the Modernist movement in Egyptian literature.” 2  ডঃ ত্বহা হুসায়ন রচিত অসংখ্য গ্রন্থাবলীর মধ্যে আল- আইয়্যাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। এটি তিন খন্ডে সমাপ্ত। যার মধ্যে তিনি নিজ জীবনীর বিভিন্ন দিক তু

মনে রাখার সহজ কৌশলে Exclusive টেকনিকে আর্ন্তজাতিক বিষয়াবলী সাধারন জ্ঞান। আশা করি মনোযোগ দিয়ে একবার পড়লেই মনে থাকবে।

মনে রাখার সহজ কৌশলে Exclusive টেকনিকে আর্ন্তজাতিক বিষয়াবলী সাধারন জ্ঞান। আশা করি মনোযোগ দিয়ে একবার পড়লেই মনে থাকবে। SAARC এর সদস্যঃ Exclusive টেকনিকঃ NIPA MBBS পড়তে আগ্রহী। NIPA = নেপাল, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্থান। MBBS= মালদীপ, বাংলাদেশ, ভুটান, শ্রীলংকা। ECO – ভুক্ত শর্টকাট মনে রাখার নিয়মঃ Exclusive টেকনিকঃ আইতু + ৭ স্তান। =আজারবাইজান, ইরান, তুরস্ক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, কাজাখস্তান, কিনঘিজিস্তান, তুর্কিমেনিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান। D-8 ভুক্ত শর্টকাট মনে রাখার নিয়মঃ Exclusive টেকনিকঃ বাপ মা নাই তুমিই সব। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালয়শিয়া, নাইজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, মিসর, ইরান। ASEAN এর সদস্যঃ Exclusive টেকনিকঃ MTV তে FILM দেখলে BCS হবে না। Mayanmar, Thailand, Vietnam, Phillipines, Indonesia, Laos, Malaysia, Brunei, Cambodia, Singapore. Super Seven এর সদস্যঃ Exclusive টেকনিকঃ থামাই+ সিতাদহ থাইল্যান্ড, মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিংগাপুর, তাইওয়ান, দঃ কোরিয়া, হংকং। থাইল্যান্ড, মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া + FOUR TIGERS. Scandinavian States এর সদস্যঃ Exclusive টেকন