মোরা বড় হতে চাই - দ্বিতীয় খন্ড
পড়লেখা আর পড়ালেখা
আমরা
আমাদের ছোট বেলায় শুনতাম পড়ালেখা করে যে গাড়িঘোড়ায় চড়ে সে। আর দুষ্ট ছেলেরা
ফাঁকি দেয়ার জন্যে বলতো পড়ালেখা করে যে গাড়ি চাপা পড়ে সে। আজ বড় হয়ে দেখছি
শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই গাড়ি চাপা পড়ে। আর শিক্ষিতরা গাড়ি কিনে যেসব গাড়িতে
চড়ে ঠিক তেমনি লেখাপড়া না করেও আজকালকার মাস্তানরা নানা ভাবে গাড়ি হাঁকায়।
এতে কি আমরা হতাশ হবো ? নাহ্ কক্ষনোই না। কারণ আমরা জানি মাস্তানরা গাড়ি
চালালেও তারা মানুষের ভালবাসা পায় না, তবে এমনকি অনেক ক্ষেত্রে নিজের
পিতামাতারও না। তবে একটা জিনিস তারা সবসময় বেশি পায়- সমাজের সকলের কাছ
থেকেই পায়, সেটি হলো ঘৃণা আর ঘৃণা। কাজেই আমরা লেখাপড়া করবো শুধু গাড়িতে
চড়ার জন্যই নয়- বরং বড় অনেক বড় মানুষের মতো মানুষ হওয়ার জন্যে। স্বয়ং
বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ তাঁর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ফেরেশতা জিবরাইলের মাধ্যমে
সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে সর্বপ্রথম এ আসমানী
নির্দেশটি পাঠালেন, তোমরা জান সেই মহান গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশটি কি ছিলো ?
সেই পবিত্রতম বাণীটি ছিল -‘ইক্করা’ মানে ‘পড়’। তোমরা কি জান ? কেন আমাদের
আশরাফুল মাখলুকাত অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা জীব বলা হয় ? সে এক মজার কাহিনী, আদম
(আ) কে সৃষ্টির পরপরই একটি চমৎকার প্রতিযোগিতা হয়েছিল। একদিকে সকল ফেরেশতা
অপর দিকে আদম (আ) একা। আল্লাহ ছিলেন প্রধান বিচারক। প্রতিযোগিতায়
বিষয়বস্তু ছিল ‘জ্ঞান ’। আমাদের আদি পিতা আদম (আ) সে প্রতিযোগিতায়
চ্যাম্পিয়ান হয়েছিলেন বলেই আমরা আশরাফুল মাখলুকাত খেতাব পেয়েছি। রাসূল (সা)
জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত
জ্ঞানার্জন করো।’এর আগে পরে কোন সময় জ্ঞান অর্জন থেকে বাদ দেয়া যায় কি ?
জ্ঞানের শক্তিতেই একদিন মুসলমানরা সারা পৃথিবীকে শাসন করেছে। ১২৫০ সালে
স্পেনের টলেডোতে আজকের সভ্য ইউরোপের শিক্ষক মুসলমানেরা প্রথম শিক্ষাকেন্দ্র
school of Orientation Studies স্থাপন করেন। কর্ডোভাতে পৃথিবীর প্রথম
বিশ্ববিদ্যালয় মুসলমানরা স্থাপন করেন। যেখানে সব সময়ে ইউরোপ, এশিয়া,
আফ্রিকা মহাদেশের প্রায় দশ হাজার ছাত্র অধ্যয়ন করতো। যার ব্যাপারে
যোশেফহেলের মন্তব্য হলো :
Cordova
Shone like lighthouse on the the darkness of Europe. আমি সেই সময়ের কথা
বলছি যখন ইউরোপে খ্রিস্টানদের সবচেয়ে বড় লাইব্রেরিটি ছিল রানী ইসাবেলার
যাতে বইয়ের সংখ্যা ছিল মাত্র ২০১ টি। অপরদিকে তৎকালীন ফাতেমীয় সাম্রাজ্যের
রাজধানী কায়রোতে মুসলমানদের পাঠাগারে জমা ছিল ১০ লক্ষ বই।
ঠিক
সেই সময় অসভ্য ইউরোপে মুসলমানদের আবিষ্কার পৃথিবী গোল বলার অপরাধে মিঃ
ব্রুনোকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়, গ্যালিলিওকে বিজ্ঞানের প্রচারের জন্যে
কারাগারে আটক করা হয় অবশেষে অন্ধ, বধির হয়ে তিনি সেখানেই মারা যান। কাগজ,
ঘড়ি, বারুদ, মানচিত্র, ইউরোপ থেকে ভারতের রাস্তা এমনকি আমেরিকার আবিষ্কর্তা
মুসলমানেরা। দুর্ভাগ্য-আজকে তারাই বিশ্বে সবচেযে পশ্চাদপদ জাতি। কারণ এক
সময় পৃথিবীর শিক্ষক হলেও এখন তারাই সবচেয়ে কম লেখাপড়া করে। অথচ রাসূল (সা)
বলেছেন- জ্ঞান হচ্ছে মুসলমানদের হারানো সম্পদ।
সুতরাং
বড় হাতে হলে এ বিশ্বটাকে আবারো জয় করতে চাইলে অনেক অ-নে-ক বেশি পড়ালেখা
করতে হবে। মুসলিম ছাড়াও বিশ্বে যারাই বড় হয়েছেন তারাই প্রচন্ড পড়ালেখা করেই
বড় হয়েছেন। যিনি দারিদ্রতার কারণে ঘড়ি বিক্রি করে দিয়ে দিনে আধপেট খেয়ে ,
সারাদিন লাইব্রেরিতে পড়ে থাকতেন আর পৃথিবীকে পরিমাপ করতেন। তিনিই পরবর্তীতে
রূপকথাকেও ছাড়িয়ে গিয়ে জগৎবিখ্যাত নেপোলিয়ান হয়েছিলেন। হেলেন কিলার ছিলেন
সম্পূর্ণ অন্ধ; কিন্তু চক্ষুষ্মান অনেক অনেক লোকের চাইতেও তিনি অধিক সংখ্যক
বই পড়েছেন। সাধারনের চাইতে কমপক্ষে একশ গুণ এবং নিজেই লিখেছেন এগারোটি
গ্রন্থ। আর নোবেল বিজয়ী বার্নার্ডশ, দারিদ্রতার কারণে মাত্র পাঁচ বছর
স্কুলে লেখাপড়া করতে পেরেছিলেন তিনি । কিন্তু তিনিই ছিলেন বিশ্বে তার যুগের
সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক। তিনি মাত্র সাত বছর বয়সে সেক্সপীয়ার , বুনিয়ান
,আলিফ লায়লা , বাইবেল প্রভৃতি অমর গ্রন্থ শেষ করেন আর বারো বছর বয়সে
ডিকেন্স , শেলী বইগুলি হজম করে ফেলেন তিনি। আমরাও যদি বড় হতে চাই পড়া লেখার
কোন বিকল্প নেই। আমাদের উপমহাদেশেও যে সকল ব্যক্তিত্বকে মানুষ সর্বদা
স্মরণ করে তারা প্রায় প্রত্যেকেই ছিলেন মহাজ্ঞাণী আর সুউচ্চ ক্যারিয়ার
সমৃদ্ধ। আল্লামা ডঃ ইকবাল মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে ব্যারিস্টার ও ডক্টরেট
ডিগ্রি অর্জন করেন। কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ মাত্র চব্বিশ চছর বছর
বয়সে ব্যারিস্টার হন । ভারতের জনক মহাত্মা গান্ধী , প্রথম প্রধানমন্ত্রী
নেহেরু ব্যারিস্টার ছিলেন। আমাদের নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, শেরে বাংলা,
সোহরাওয়ার্দী এরাও তাদের সময়ের বিখ্যাত শিক্ষাবিদ ও ব্যারিস্টার ছিলেন।
তাদের কথা চিন্তা করে এসো , গোলাপ কলিরা আমরা ম্লোগান দেই ‘বিশ্বটাকে গড়তে
হলে সবার আগে নিজেকে গড়ো \’ একজন মহান ব্যক্তির মহান কথা। তিনি যখন
অসহায়ভাবে রাশিয়ার এক রেলস্টেশনে মারা যান তখন তার ওভারকোটের পকেটে পাওয়া
যায় মূল্যবান এক বই ‘দ্যা সেইং অফ প্রোফেট মোহাম্মদ ’। সেই নোবেল বিজয়ী লিও
টলস্টয়কে বলা হয়েছিল জাতীয় উন্নয়নের জন্যে আপনি যুব সমাজের প্রতি কিছু
বলুন। তিনি বলেছিলেন আমার তিনটি পরামর্শ আছে :
১। পড়
২। পড়
৩। আর পড় ।
এটি যেন মহান আল্লাহর সেই প্রথম বাণী ‘পড় তোমার সে প্রভুর নামে’ এর প্রতিফলন।
প্রতিভা : জন্মগত ? নাকি সাধনালব্ধ?
বিজ্ঞানী
আইনস্টাইন: অনেক সময় আমাদের মনে হয় আল্লাহ বোধহয় কিছু মানুষকে জন্মগতভাবেই
প্রতিভা দিয়েছেন সুতরাং আমাদের চেষ্টা করলেও খুব একটা লাভ হবে না। এতে করে
নিজেদের ভিতর অজান্তেই এক ধরনের নিষ্ক্রিয়তা জেঁকে বসে , আত্মউন্নয়নের গতি
হয়ে যায় শ্লথ। এই তো সেদিন একটি বিজ্ঞান বিষয়ক পত্রিকা অহরহতে দেখলাম কিছু
নিউরোলজিস্ট গবেষণা করে বলেছেন, বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইনের সংরক্ষিত মগজ
সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা, অনেকটা বড়। এটাকে সত্য ধরে নিয়েও বলা যায় , এটি
হচ্ছে একটি আশ্চর্যজনক ব্যতিক্রম ইংরেজিতে যাকে বলা হয় মিরাকল আর ইসলামের
দৃষ্টিতে বলা হয় মোজেজা। আল্লাহ তার কুদরতি ব্যবস্থাপনায় মানুষের শিক্ষার
জন্যেই কদাচিৎ এমনটি করে থাকেন। আমার ধারণা কিছু উজ্জ্বল ব্যতিক্রম বাদ
দিলে সাধারণভাবে সকল মানুষের প্রতিভাই আল্লাহ প্রদত্তভাবে সমান। অতঃপর
সাধনার কম বেশির কারণে প্রতিভার স্ফুরনের ক্ষেত্রে হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে। আমরা
অনেকেই প্রায়ই বলি ‘আমার কোন যোগ্যতা নেই ..’। আমার মনে হয় ইসলামের
দৃষ্টিতে আমাদের এটা বলার কোন সুযোগ নেই । কেননা আল্লাহ বলেছেন ‘...নিশ্চয়ই
আমি পৃথিবীতে আমার খলিফা (মানুষকে) প্রেরণ করবো ।’ খলিফা মানে হচ্ছে মহান
আল্লাহর প্রতিনিধি কিন্তু শুধুমাত্র নিজের পাড়া, গ্রাম , থানা, জেলা বা
দেশের জন্যে নয় বরং সমগ্র পৃথিবীর জন্যে। সুতরাং প্রিয় বন্ধুরা বুঝতেই
পারছো , প্রতিটি মানুষ বিশেষ করে মুসলিমদের জন্মগতভাবেই আল্লাহপাক কত বড়
দায়িত্ব দিয়েছেন। সুতরাং এটা কি ভাবা যায় যে বড় বিশাল দায়িত্ব আল্লাহ যাদের
দিলেন তাদের তিনি যোগ্যতা কম দিয়েছেন ? অথবা তিনি জানতেনই না যে এ
মানুষটার যোগ্যতা কম । (নাউজুবিল্লাহ!) আল্লাহর ওপর এত বড় অভিযোগ কেউ কি
করতে পারে? সুতরাং যারা বলেন “..আমার কোন যোগ্যতা নেই ...”। অথবা ‘..আমার
যোগ্যতা কম ..’। তারা প্রকারান্তরে আল্লাহকেই অভিযুক্ত করেন, কেননা তিনিই
তো আমাদের সৃস্টি করেছেন এবং সর্বজ্ঞ হিসেবেই এই বিশাল দায়িত্ব আমাদের দান
করেছেন। আমাদের কারো যোগ্যতা তুলনামূলক ভাবে অন্যদের চাইতে কম মনে হলে আমরা
এতটুকু বলতে পারি যে, ...“আমি এখনো আমার যোগ্যতার বিকাশ ঘটাতে পারিনি।’ জন
.ডি . রকফেলার পথম জীবনে ঘন্টায় মাত্র চার সেন্ট (মার্কিন চার পয়সা )
বিনিময়ে আলু ক্ষেতে কাঠফাটা রোদের ভিতর লোহার কোদাল দিয়ে কাজ করেছেন।
অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের বিনিময়ে তিনি পরিণত হয়েছিলেন সেই সময়কার আমেরিকার
সবচেয়ে সেরা ধনীতে। প্রায় ষাট বৎসর আগে মৃত্যুর পূর্বে তিনি দু ’বিলিয়ন
ডলার (প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা ) এর মালিক হয়েছিলেন। যার সম্পদ এখনও বেড়ে
চলেছে প্রতি মিনিটে প্রায় একশ ডলার অর্থাৎ দিনে প্রায় ৭২ লক্ষ টাকা করে।
যদিও তিনি মুসলিম ছিলেন না তবুও তিনি নিয়মিত প্রার্থনা করতেন , নাচতেন না
,থিয়েটারে যেতেন না কখনও মদ্যপান এমন কি ধুমপান পর্যন্ত করতেন না ।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ সুপার কম্পিটার
কিশোর
বন্ধুরা , এই শিরোনাম দেখে তোমরা কি বিস্ময়ে থ’ হয়ে গেলে ? নাকি ভাবছো যে ,
আমার মাথাটি এক্কেবারে খারাপ হয়ে গেছে ! নাহ্ বিলকুল সব ঠিক হ্যায় । হ্যাঁ
,অবশ্য আমি তোমাদের কে এখন তোমাদের অতসব মানুষের মাথার কথাই বলবো। ভাবছ এ
বিশ্লেষণ শুনে তোমাদের মাথাই আবার খারাপ হয়ে যায় কি না ? যাক আল্লাহ ভরসা।
আমাদের দেহের ভিতর মাত্র তিন পাউন্ড ওজনের মস্তিস্কের গঠন সবচেয়ে জটিল।
এমনি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার কম্পিউটারের চেয়ে হাজার হাজার কোটি গুণ
জটিল। ডাক্তার ওয়াল্টারের মতে বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে মানুষের মত সমক্ষমতার
একটি বৈদ্যুতিক বা এটমিক মস্তিস্ক তৈরি করতে চাইলে পনের শত কোটি, কোটি
টাকারও বেশি প্রয়োজন হবে। সংখ্যাটিকে অংকে লিখলে দাঁড়ায়
১৫০০,০০০০০০০,০০০০০০০ টাকা । অর্থাৎ যে পরিমাণ টাকা দিয়ে বর্তমান সময়ের
অত্যাধুনিক প্রায় দশ হাজার কোটি কম্পিউটার কেনা সম্ভব ।........য়েই থামো,
শরীরে একটু চিমটি কেটে দেখোতো স্বপ্ন দেখছো কিনা ? আরো মজার খবর ... এই
মস্তিষ্ককে চালাতে এক হাজার কোটি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ এর প্রয়োজন হবে। দৈনিক
চালু রাখার জন্যে প্রয়োজন হবে কর্নফুলির কাপ্তাইয়ের মতো তিন হাজার আড়াইশত
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামগ্রিক উৎপাদন। সাবধান তোমরা কিন্তু ভয় পেয়ে যেও না ,
এই যান্ত্রিক মস্তিস্কের আয়তন হবে আঠারোটি এক’শ তলা বিল্ডিংয়ের সমান ।
আমাদের মস্তিষ্কের সবচেয়ে ওপরের সাদা ঢেউ খেলানো অংশকে কর্টেক্স বলে ।
স্তরে স্তরে বিন্যস্ত এই কর্টেক্সকে সমান্তরালভাবে সাজালে এর আয়তন হবে
দু’হাজার বর্গমাইলেরও বেশি অর্থাৎ প্রায় ব্রুনাই দেশের সমান। চৌদ্দশত কোটি
নিরপেক্ষ জীবকোষ দিয়ে কর্টেক্স গঠিত। এ সকল পরস্পর বিচ্ছিন্ন সম্পূর্ণ একক
জীবকোষকে নিউরন বলা হয়। এগুলি এতই ক্ষুদ্র যে কয়েকশত একত্রে একটি আলপিনের
মাথায় স্থান নিতে পারে। প্রতি সেকেন্ডেই শত শত হাজার হাজার নিউরন এসে
ব্রেইনের প্রাথমিক স্তরে জমা হতে থাকে। এরা একেকটি ইলেক্ট্রনিক সিগনাল যা
শরীরের বিভিন্ন অংশের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে এবং মূল নিয়ন্ত্রণের আদেশ অতি
দ্রুত হাজার কোটি সেলে ছড়িয়ে দেয়। ব্রেইনের এ সকল প্রতিক্রিয়া অনেক সময়
সেকেন্ডের দশ লক্ষ ভাগের মাত্র একভাগ সময়ে ঘটতে পারে । আমাদের দেহের
মেরুদন্ডের মাধ্যমে নিউরনগুলি সারা শরীরের যন্ত্রপাতিগুলিকে সজীব ও তৎপর
রাখে। এগুলির আবার অনেক স্বতন্ত্র বিভাগ রয়েছে যার সংখ্যা প্রায় ২৫০টি।
যেমন কোন অংশ শোনার জন্যে. কোন অংশ বলার জন্য, কোন অংশ দেখার জন্য আবার কোন
অংশ অনুভূতিগুলিকে কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল টাওয়ারে ট্রান্সমিট করার জন্যে
ব্যস্ত থাকে। এতে আবার বসানো হয়েছে একটি স্বয়ংক্রিয় শক্তিশালী ‘মেমোরি
সেল’। যার কাজ হলো নিত্য নতুন সংগ্রহ গুলিকে যথাযথভাবে সংরক্ষন করা এবং
প্রয়োজনের সময় তাকে ‘রি ওয়াইন্ড’ করে মেমোরি গুলিকে সামনে নিয়ে আসা। এই
স্মৃতি সংরক্ষণশালা প্রতি সেকেন্ড ১০টি নতুন বস্তুকে স্থান করে দিতে পারে।
পরম আশ্চর্যর বিষয় হচ্ছে, পৃথিবীর সর্বকালের সর্বপ্রকারের যাবতীয় তথ্য ও
তত্ত্বকে একত্র করে এক জায়গায় করে যদি এই মেমোরি সেলে রাখা যায় তাতে এর
লক্ষ ভাগের একভাগ জায়গাও পূরণ হবে না। সুবহানআল্লাহ ! আমরা আল্লাহর এ
মহিমার শুকরিয়া কিভাবে আদায় করবো ভেবে কূলকিনারা পাই না। প্রিয় বন্ধুরা,
তোমরা কি অনুধাবন করতে পারছো কত শক্তিশালী আমাদের এ মস্তিষ্ক ! তবে দুঃখের
বিষয়, আমরা এর হাজার ভাগের একভাগও কাজে লাগাতে পারি না। আধুনিক বিজ্ঞান এ
নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করছে। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে আমাদের প্রত্যেকের আল্লাহ
প্রদত্ত এই মহাশক্তিশালী কম্পিউটার (মস্তিস্ক) কে কাজে লাগাতে পারবো।
সুপ্রিয় কিশোর বন্ধুরা, আমরা এ আলোচনাটা শেষ করতে চাই একজন মহামনীষীর
বক্তব্য দিয়ে । তিনি বলেছিলেন , “নো দাই সেলফ’ অর্থাৎ নিজেকে জানো ।’ এ যেন
সেই আরবি প্রবাদেরই প্রতিধ্বনি ‘মান আরাফা নাফসাহু ফাক্বাদ আরাফা
রাব্বাহু’ অর্থাৎ যে ব্যক্তি নিজকে চিনতে পারলো সে তার প্রভুকে চিনতে
পারলো।
বড় যদি হতে চাও
বর্তমান
পৃথিবীর সবচেয়ে মেধাবী মানুষটি হচেছ আমেরিকার পেনসিলভিনিয়া রাজ্যের ফেরিস
এলগার । ৮৬ বৎসর বয়সী এ অসাধারণ মানুষটি স্কুল কলেজের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা না
নিয়েও অনেক বিস্ময়কর কান্ড করেছেন। আই .কিউ টেস্ট বা বুদ্ধিমাপক পরীক্ষায়
ফেরীসের বুদ্ধাংক ২০০ এর মধ্যে ১৯৭। প্রতি একশ কোটি মানুষের ভিতর মাত্র
একজন বুদ্ধাংক ১৯৩ এর উপর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে হিসাবে পৃথিবীর বর্তমান
প্রায় ৬শ কোটি মানুষের ভিতর ফেরীসের মতো মাত্র ৬ জন লোক থাকার কথা। কিন্তু
জন্মগতভাবে বুদ্ধি ও মেধার ক্ষেত্রে ফেরীসের কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই বললেই
চলে । প্রকৃতপক্ষে ফেরীস একজন সুপার জিনিয়াস, ওর বুদ্ধি সাধারণ একজন
মানুষের তিনগুণ . প্রতিভাবানদের দ্বিগুণ। প্রতিভা সম্পর্কে তিনি যা বলেন তা
তার মত অদ্বিতীয় মেধাবী ব্যক্তির কাছ থেকে আশা করা যায় না। তিনি বলেন ,
‘প্রতিভা আর কিছু নয় পরিশ্রম। প্রতিভার বিকাশে কঠোর পরিশ্রমই
গুরুত্বপূর্ণ।’ সুপ্রিয় বন্ধুরা , আমরা দেখেছি সকল জিনিয়াসই প্রতিভা
অর্জনের জন্যে পরিশ্রমের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। কিন্তু তাদের জীবনে আরেকটি
বিষয় লক্ষ্য করি তা হচ্ছে সুন্দর পদ্ধতি বা কৌশল। আমরা এখন অধ্যয়নের
ক্ষেত্রে তাদের সেই সকল মূল্যবান পদ্ধতি সমূহ আলোচনার চেষ্টা করবো।
অধ্যয়নের পূর্বে প্রস্তুতিমূলক বিষয়সমূহ:
অধ্যয়নের
টেকনিক নয় বরং যে সকল পূর্ব প্রস্তুতির মাধ্যমে আমরা নিজেদের প্রতিভাকে
আরো শাণিত করতে পারবো সে বিষয়গুলি এখানে আলোচনা করা হয়েছেঃ
১.
খাবার : খাবারের পরিমাণের ওপর মস্তিস্ক চালনা নির্ভর করে। ভালভাবে
মস্তিস্ক কাজে লাগাতে চাইলে পেটে একটু ক্ষুধা রেখে খেতে হয়। রাসূল (সা) যে
নিজে অল্পাহার করেছেন ও আমাদের করার জন্যে বলেছেন তা অত্যন্ত বিজ্ঞান
ভিত্তিক । অতিভোজনের ফলে রক্ত মাথা থেকে পাকস্থলীতে হজম ক্রিয়ার জন্যে নেমে
আসে। তার ফলে মস্তিস্কের ক্রিয়ার ব্যাঘাত হয়। তদ্রুপ অনাহারও মস্তিস্কের
ক্রিয়ার সমস্যা করে।ভি .এইচ .মর্টাম তার ‘‘হিউম্যান নিউট্রিশান ” গ্রন্থে
ছাত্রদের মোট পাঁচবার খেতে বলেছেন। এর অর্থ হচ্ছে ছাত্রদের বারে বেশি খেতে
হবে কিন্তু পরিমাণে কম।
২.
কোষ্ঠশুদ্ধি : নিয়মিত কোষ্ঠশুদ্ধি না হলে পেটে জমা খাদ্যের অংশগুলি পচে যে
গ্যাস হয় তা মস্তিস্কের উপর সরাসরি বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে। এজন্যে যাদের
বদহজম আছে তারা মাথার কাজ বেশি করতে পারে না।
৩.
চাই প্রচুর অক্সিজেন : মস্তিস্ক চালনাকালে কর্টেক্সের বিশেষ বিশেষ
কেন্দ্রের নিউরন পুঞ্জের মধ্যে অত্যন্ত প্রবলবেগে বৈদ্যুতিক প্রবাহের ন্যায়
এক প্রকার তীব্র প্রবাহ চলতে থাকে। বৈজ্ঞানিকগণ এই প্রবাহের গতি মেপে
দেখেছেন। নিউরন-সৃষ্ট তরঙ্গ প্রবাহের আঁকাবাঁকা রেখাগুলি সেকেন্ডে দশ থেকে
পনের বার পর্যন্ত স্পন্দিত হয়। এতে যে কি পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয় তা
সহজেই অনুমেয়। তাই যখনই মস্তিস্কের বিশেষ কেন্দ্র সক্রিয় হয়ে ওঠে , তখন
রক্ত সেখানে এসে সর্বপ্রকার শক্তি যুগিয়ে দেয়। রক্ত যে শক্তি দেয় তার
প্রধান দুটি অংশের একটা হলো শর্করা এবং অন্যটা হলো অক্সিজেন। মস্তিষ্কেও
কঠোর স্নায়বিক কাজের জন্য যে পরিমাণ বাড়তি অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় তার
পরিমাণ স্বাভাবিক দেহ ধারণের জন্যে যেটুকু অক্সিজেন প্রয়োজন হয় তার চাইতে
দশ থেকে বিশগুণ বেশি। সুতরাং এই অতিরিক্ত অক্সিজেন যাতে রক্ত সংগ্রহ করতে
পারে তার জন্যে প্রত্যেক মস্তিষ্কজীবীকে প্রত্যহ অন্তত দুঘন্টা মুক্তবাতাসে
কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র একাজটি না করায় পরিণত বয়সে
খুবই অসুস্থ হয়ে যান। আর আমরা দেখি রাসূল (সা ) সহ আরো যে সকল মণীষী ধ্যান
করেছেন তারা প্রত্যেকেই বেছে নিয়েছেন বিশুদ্ধ বায়ুময় নিরিবিলি জায়গা।
অর্থাৎ বিশুদ্ধ অক্সিজেন মগজের ক্ষমতাকে শাণিত করে।
৪.
শরীরের জন্য ঘুম : ঘুম মস্তিষ্কজীবীদের এক অমূল্য ঔষধ। অনেকেই মনে করেন
যারা বেশি পড়ালেখা করে তাদের কম ঘুমালেই চলে। কিন্তু ধারনাটি ভুল। বরং
তাদেরই ঘুমের দরকার হয় বেশি। দু’টি কারণে তাদের ঘুমের দরকার হয় বেশি।
প্রথমতঃ এতে কর্টেক্সের নিউরনগুলির পরিপূর্ণ বিশ্রাম ঘটে, দ্বিতীয়তঃ
নিদ্রাকালে রক্ত নিজে বিশোধিত হয় এবং বাতাস থেকে প্রচুর পরিমাণে বাড়তি
অক্সিজেন সংগ্রহ করে নেয়। আর তাই চার্চিল নব্বই বৎসর বয়সেও বার থেকে পনের
ঘন্টা করে মানসিক পরিশ্রম করতে পারতেন। কেননা তিনি সেই বয়সেই নয় ঘন্টা করে
নিদ্রা যেতেন।
৫.
সময় ও পরিবেশ : পড়ালেখার জন্য সময় ও পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
মহাগ্রন্থ আল কুরআন অধ্যয়নের জন্যে শেষরাতের সময়টিকে বেশি উৎসাহিত করা
হয়েছে। কেননা সে সময়ে সারা পৃথিবী থাকে নিস্তব্ধ আর পরিবেশটা থাকে অনেকটা
ঠান্ডা। সুতরাং কোলাহলমুক্ত পরিবেশ আর অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা আবহাওয়া মগজকে
কার্যকরী করার জন্যে বেশি উপযোগী । আর তাই গরম দেশের চাইতে শীতপ্রধান দেশের
মানুষ তুলনামূলকভাবে বেশি মেধাবী হয়।
একজন
কিশোরের গল্প বলবো, সে মাইলের পর মাইল হেঁটে গিয়ে বই ধার করে এনে পড়তো।
তার পড়ার সময় ছিল দিনের কাজের শেষে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়তো, কামরার মধ্যে
চুল্লিতে একটা নতুন কাঠ জ্বালিয়ে সেই আলোয় সে পড়তো, ঘুমে ঢুলে না পড়া
পর্যন্ত। কালক্রমে সেই হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের মহান প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম
লিংকন।
Comments
Post a Comment