Skip to main content

মোরা বড় হতে চাই - তৃতীয় খন্ড

মোরা বড় হতে চাই - তৃতীয় খন্ড

সর্বকনিষ্ঠ বৈমানিক

এ পর্যায়ে তোমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই আমাদেরই এক নতুন বন্ধু বাংলার দামাল কিশোর ,যার কৃতিত্বে সবার বুক ভরে যায়। আর চোখে আসে আনন্দের অশ্রু। ছেলেটির নাম আলী রাকিব । ১৯৯৯ সালের ২২শে এপ্রিল, তখন তার বয়স সবে মাত্র তের বছর পাঁচ মাস। ঐ দিনেই রোদ ঝলমল সকালে জীবনে প্রথমবার বিমানে চড়ে নয়, এক্কেবারে নিজে বিমান চালিয়ে আকাশে উঠেছিল সে। আমেরিকার ফ্লোরিডার অর্মন্ডবিচ ডোমেস্টিক এয়ারপোর্ট। ছোট্ট রাকীব, গ্রাউন্ডচেকিং শেষে, কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে ক্লিয়ারেন্স পেয়ে রানওয়ের ওপর দিয়ে ৯৯ নট বেগে সা-সা ছুটে চলা সেসনা-১৭২ কে এক ইঞ্চি পরিমাণ থ্রটল টেনে ভূমির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তুলে এনেছিল ঊর্ধ্বপানে । হয়তো তখন তার পেটটা চিনচিন করছিল , রক্তিম গালদুটি ফ্যাকাশে হয়েছিল , চোখ দুটোও হয়েছিল স্থির- আর একটু একটু ভয় লেগেছিল বৈকি। কিন্তু তার পরই দুরন্ত ঈগলের ডানা মেলে ওড়ার অপার আনন্দ। বিক্ষুব্ধ ভয়াল আটলান্টিকের দু’হাজার ফিট ওপর দিয়ে (এর ওপরে ওঠার অনুমতি তার ছিল না) । সে উড়েছিল প্রায় পৌনে দু’ঘন্টা । (ওহ! গা ছমছম করে ওঠার মতো ঘটনা; তাই না?) সাথে সাথে সেই পিচ্চি দস্যি ছেলেটি সৃষ্টি করলো এক নতুন রেকর্ড, সে হলো আটলান্টিকের ওপর দিয়ে ওড়া সর্বকণিষ্ঠ বাংলাদেশী বৈমানিক । এর পরের দু’সপ্তাহের মোট ষাট ঘন্টা ওড়ে, সে নানা করসৎ রপ্ত করে । মনে হয় চিৎকার করে আটলান্টিকের ওপারে খোদ আমেরিকায় পৌঁছে দেই আমাদের বুলন্দ আওয়াজ সাবাস! রাকিব,সাবাস!!

মাকে নিয়ে ওরা চার ভাইবোন থাকে আমেরিকায় । বাবা আলীমুল্লাহ কুয়েত এয়ারলাইন্সের সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার , মামা সেখানেই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, বড়ভাই আলীরেজা আমেরিকান এয়ারলাইন্সে এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কর্মরত। কিশোর বন্ধুরা তোমরা কি ভাবছো এতকিছুর সুবাদেই কি সে পেয়েছিল বর্ণাঢ্য সুযোগ ? কিন্তু না, আসল ঘটনা অন্য রকম । কেম্বারল্যান্ড স্কুলের জুনিয়র লেভেল পরীক্ষায় সে কৃতিত্বপূর্ণ জিপি এ ৪.০ পয়েন্ট অর্জন করে। প্রতিটি বিষয়ের পরীক্ষাতেই ৯৪ থেকে ১০০ নম্বর পেলেই কেবল তা অর্জন করা সম্ভব। তার মূল কৃতিত্ব এখানেই, সে এই জিপিএ পয়েন্টের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মার্কসধারী প্রথম বাংলাদেশী । শুধু কি তাই? কাউন্টি বোর্ড অব এডুকেশনের পক্ষ থেকে তাকে দেয়া হয় ন্যাশনাল জুনিয়ার অনার্স সোসাইটির পদক। আরো আছে, আমেরিকার সেরা তিনশ মেধাবী ছাত্রের সাথে ওয়াশিংটন ডিসি সফরের আমন্ত্রণ, এমনকি খোদ হোয়াইট হাউসেও ভ্রমন। কিন্তু রাকিবের জন্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পুরস্কার ছিল এমব্রেরিডাল এরোনটিক্যাল ইউনিভার্সিটির ইয়ং ঈগল প্রোগ্রামের আমন্ত্রণটি। এ প্রোগ্রামে প্রতি বছর আমেরিকার স্কুল পর্যায়ের মেধাবী ছাত্রদের ভিতর থেকে সেরা পাঁচজনকে বাছাই করা হয় বিনা খরচায় বিমান চালনার প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্যে। আমাদের আলী রাকীব হলো, এ বছর সমগ্র আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সেই সেরা পাঁচজনের একজন। আমাদের দেশের মুখ উজ্জ্বল করার জন্য চলো আমরা সবাই তাকে জানাই বুকভরা ভালবাসা আর অভিনন্দন। রাকিবদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলা রুপগঞ্জ থানার মুড়াপাড়া গ্রামে। ইস ভুমিকাতেই কত্তো কথা হলো, জানি না তোমাদের এত্তো প্যাচাল ভাল লাগে কিনা ? নাকি রেগেমেগে , আমার কল্পিত আকৃতি বেচারার প্রতি বারবার চোখ রাঙ্গাও ! যাক্ চলো আর দেরি নয়। ঝটপট শুরু করি কিছু কাজের কাজ।
চব্বিশ ঘন্টা পড়া

হেডিং দেখেই তোমরা হৈচৈ করো না কিন্তু। আমাকে আগেভাগে একটু খোলাসা করতে দাও। আচ্ছা বলোতো, প্রতিদিন আমাদের কত ঘন্টা সময়? সবাই বলবে ক্যানো, চব্বিশ ঘন্টা! এটা কি ইলাস্টিকের মতো টেনেটুনে এক-আধটু বড় করা যায়? হয়তো হেসে কুটিকুটি হয়ে বলছো নাহ “এক্কেবারে না। এটা অসম্ভব ব্যাপার। আসলেও ঠিক তাই। তাহলে উপায় ? চলোই না চেষ্টা করে দেখা যাক , কোন সমাধান বের করা যায় কিনা? আমরা চব্বিশ ঘন্টায় অর্থাৎ সারাদিনে মোটামুটি প্রধান প্রধান কি কি কাজ করি? পড়া লেখা, গোসল, খাওয়া, নামাজ, ঘুম, খেলাধুলা ইত্যাদি ...তাই না? এবার এসো , আমরা একটু বিশ্লেষণ করি ...গান্ধিজী যেখানে গোসল করতেন সেখানে প্রতিদিন একটি করে গীতার শ্লোক লিখে রাখতেন। অতঃপর গোসলের সময় তা গানের সুরে সুরে মুখস্ত করে ফেলতেন। আমরাও এভাবে প্রতিদিন একটি করে মহামনীষীদের বাণী শিখতে পারি। আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট অন্য লোকদের সাথে কথোপকথনের সময়ও ফাঁক দিয়ে বই পড়তেন এবং গ্রামে ভ্রমণের সময় প্রতিদিন প্রায় তিনটি করে বই পড়তেন। আর নেপোলিয়ান যুদ্ধে গেলেও তার সাথে থাকতো একটি চলমান লাইব্রেরি এবং যুদ্ধক্ষেত্রেও তিনি বই পড়তেন। রাসূল (সা) এর ওপর প্রচন্ড রণাঙ্গনেও নাজিল হতো মহাগ্রন্থ আল-কুরআন; আর তিনি তা যথাযথভাবে আত্মস্থ করতেন। হযরত আলী (রা) এর ব্যক্তিগত হাদিস সংকলন ‘সহীফা ’ সংরক্ষিত থাকতো সর্বদা তার তলোয়ারের খাপের ভিতর । ক্যাডম্যান বার বৎসর বয়সে খনির মজুর হিসাবে জীবন আরম্ভ করেন। ঝুড়ি থেকে কয়লা খালাসের পর প্রতি দুই মিনিট অবকাশে খনির অন্ধকারে মৃদু আলোতে দাঁড়িয়ে একটু বই পড়ে নিতেন। আহারের সময়ও তিনি পড়া চালিয়ে যেতেন। (আমরা অন্তত বড় ভাই বা আব্বা, আম্মার সাথে এ সময় কঠিন বিষয়গুলি পর্যালোচনা করতে পারি)। এভাবেই তিনি নিজকে স্বশিক্ষিত করে যশ ও খ্যাতি অর্জন করেন। সোহরাওয়ার্দির কোষ্ঠকাঠিন্য ছিল, টয়লেটে বেশি সময় লাগতো তাই কমোডে বসেই তিনি সেদিনের পত্রিকাগুলি পড়ে শেষ করতেন । মহাকবি শেখ সাদী ঘুমের ঘোরেই স্বপ্নযোগে পেয়েছিলেন তার জগৎ বিখ্যাত নাতে রাসূল (সা) এর সর্বশেষ শ্লোক “সাল্লু আলাইহি ওয়া আ’লিহি”। অনেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী ঘুমের ঘোরেই তাদের বিখ্যাত আবিষ্কারের তত্ত্ব পেয়েছেন। সুতরাং প্রমাণ হলো, বই সাথে না থাকলেও চব্বিশ ঘন্টা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পড়ালেখায় থাকা যায়। তাহলে আমরা কি সারাদিন শুধুমাত্র পাঠ্যবই নিয়ে পড়ে থাকবো? ভাবছো ওহ! এটাতো কুইনাইনের চেয়েও তেতো। আসলে আমি কিন্তু তোমাদের সর্বক্ষণ বইয়ের পোকা বা গোবরেপোকার মত পাঠ্যবই নিয়ে পড়ে থাকতে বলবোনা। খোঁজ নিয়ে দেখ , এবার যারা এস.এস.সি ও এইচ .এস .সি পরীক্ষায় জিপিএ 5 পেয়েছে তারা সর্বোচ্চ ১০/১২ ঘন্টা করে পাঠ্যবই পড়েছে। আর বাকি সময় পত্রিকা বা অন্যান্য বই পড়েছে। সারাদিন যারা শুধু পাঠ্যবই নিয়েই থাকে তাদের চিন্তার জগৎ হয়ে যায় সংকীর্ণ। তারা কখনো খুব ভাল রেজাল্ট করতে পারেনা। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে মায়ের কোলের শিশুটিই থেকে যায়। সময় নষ্ট হবে বলে সাঁতার কাটতে জানে না, সাইকেল চালাতে জানে না। এমন কি অনেকে বলতে পারবেনা চেচনিয়া ,কসোভো এগুলি কি? কোন ব্যক্তির নাম ? কোন ট্যাবলেটের নাম? নাকি কোনো দেশের নাম? তাই অনেক ক্ষেত্রে তাদের জীবনটা হয়ে যায় সেই নৌযাত্রীর মতো “ষোল আনাই মিছে ” সুতরাং আমাদের পাঠ্যবইয়ের ফাঁকে ফাঁকে কিছু সময় চরিত্রগঠনের জন্যে ধর্মীয় গ্রন্থ ,সাধারণ জ্ঞানের জন্য পত্রিকা ,অনুপ্রেরণার জন্য মহামনীষীদের জীবনী পড়ার সময় রাখতে হবে। এতে করে পাঠ্যবিষয়টি ভাল করে রপ্ত হবে । যেমন শুধু গোশত রান্না করলে খাওয়া যায় না, তার সাথে দিতে হয় তেল, মরিচ, আদা, রসুন, পেঁয়াজ, গরম মশলা ইত্যাদি । তবেই তা হয় মুখরোচক আর হজমকারক। স্পিনোজা বলেছেন ,“ভালো খাদ্যবস্তুতে পেট ভরে, কিন্তু ভালো বই মানুষের আত্মাকে পরিতৃপ্ত করে ।” দেকার্তে বলেছেন ,“ভালো বই পড়াটা যেন গত শতকগুলির সেরা মানুষদের সাথে কথা বলা।” ইউরোপ কাঁপানো নেপোলিয়ান কি বলেছেন জান?

তিনি বলেছেন ,“অন্তত ষাট হাজার বই সঙ্গে না থাকলে জীবন অচল ।” ভারতে বৃটিশ শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তক জন মেকলে বলেছেন আরও মজার কথা, বরং প্রচুর বই নিয়ে গরীব হয়ে চিলোকোঠায় থাকবো,তবু এমন রাজা হতে চাইনা যে বই পড়তে ভালোবাসে না ।” আর সবচাইতে চরম কথাটি বলেছেন নর্মান মেলর, “আমি চাই বই পাঠরত অবস্থায় যেন আমার মৃত্যু হয় ।” আর রাসূল (সা) বলেছেন সবচাইতে মূল্যবান কথাটি,“জ্ঞান হচ্ছে তোমাদের হারানো সম্পদ, সুতরাং যেখানে তা পাও কুড়িয়ে নাও।’’


পড়ার সুন্দর পদ্ধতি (SQ3R system)

মানুষের দেহের ওজনের চল্লিশ ভাগের একভাগ হলো তার মস্তিষ্কের ওজন । আর মৌমাছির দেহের ওজনের একশত সাতচল্লিশ ভাগের একভাগ হলো মস্কিষ্কের ওজন । ক্ষুদ্র এই পতঙ্গগুলি মস্তিষ্ককে পূর্ণভাবে ব্যবহার করে । তাদের বানানো কারুকার্যময় মৌচাক আর তাদের শাসনব্যবস্থা দেখলেই তা বুঝা যায় । হাজার মানুষের ভেতর একজনও তার মস্তিষ্কের পূর্ণ ব্যবহার করতে পারে না বরং সর্বদা মাথাকে একটি বোঝা হিসেবেই নিয়ে বেড়ায়। কিন্তু বেড়ানোর জন্য তো আর মাথার দরকার নেই একটি মেরুদন্ড হলেই চলে। যাক বন্ধুরা,একটু বোধহয় কড়া কথা বলে ফেললাম। ডোন্ট মাইন্ড, আসলে কথাটা কিন্তু তোমাদের উদ্দেশ্যে বলা হয়নি। বরং আমি সহ সর্বসাধারণের জন্যেই এটি প্রযোজ্য। এবার এসো, আমরা দেখি কিভাবে আমাদের মাথাকে পূর্ণভাবে কাজে লাগানো যায়। অন্তত পড়ার কাজে । আমেরিকার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার জন্যে একটি সুন্দর সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। সংক্ষেপে এটাকে বলা হয় SQ3R system; The SQ3R stands for;

Survey (সামগ্রিকভাবে দেখা, জরিপ বা পরিদর্শন করা, পরীক্ষা করা, সামগ্রিকভাবে পর্যালোচনা করা):

অর্থাৎ পঠিতব্য বই বা অধ্যায়কে সামগ্রিকভাবে এক নজর দেখা। এজন্যে ভূমিকা, সূচিপত্র, অধ্যায়সমূহের সংক্ষিপ্তসার দেখে নেয়া । যাতে করে সামগ্রিক বই সম্পর্কেই একটি প্রাথমিক ধারনা হয় এবং এতে সকল অধ্যায়েই অপেক্ষাকৃত সহজ ও পরিচিত লাগবে।

Question (প্রশ্ন, প্রশ্ন বোধক বাক্য):

শুধুমাত্র অধ্যায়ে দেয়া প্রশ্ন বা স্যারদের সাজেশনের প্রস্তুতি নিলেই হবে না। পঠিত বিষয়ের দশদিক থেকে যত প্রকার প্রশ্ন হতে পারে তা খুঁজে বের করতে হবে। অতঃপর শিক্ষক, অভিজ্ঞজন, সহায়ক, অন্যান্য বই থেকে তা সংগ্রহ করতে হবে । এতে করে, সে অধ্যায় সম্পর্কে সামগ্রিক ধারনা হবে। যেখান থেকেই প্রশ্ন আসুক তা হবে ‘জলবৎ তরলং’।

Read (পড়, পড়তে পারা, অর্থ উদ্ধার করা):

অতঃপর উদ্ধারকৃত উত্তর সহকারে অধ্যায়টি ভালভাবে পড়া। প্রতিটি শব্দের অর্থ বুঝে বুঝে পড়া। মনের ভিতর পঠিত বিষয়ের একটি চিত্র তৈরী করা। প্রতিটি প্যারার কি-ওয়ার্ড সমূহ (যে শব্দ দেখলে সমগ্র প্যারাটিই মনে আসে) পাশে রঙ্গিন পেন্সিল দিয়ে লিখে রাখা। মূল্যবান বাক্য বা উদ্ধৃতির নিচে রঙ্গিন পেন্সিল দিয়ে দাগিয়ে রাখা। এতে করে পরবর্তীতে দশভাগের একভাগ সময়ে তা রিভিশন দেয়া যাবে ।

Recite (আবৃত্তি করা, ফিরিস্তি দেওয়া, তেলাওয়াত করা) :


একটি বিষয়কে খুব ভালভাবে আত্মস্থ করার জন্য বারবার আবৃত্তির কোন বিকল্প নেই। সূরা আর-রাহমানের সবচেয়ে মৌলিক বক্তব্য “অতএব মানুষদের রবের কোন নিয়ামতকে তোমরা অস্বীকার করবে ” আয়াতটি মানুষদের ভালভাবে হৃদয়ঙ্গম করানোর জন্যে ৭৮ আয়াতের এ সূরায় বাক্যটি ৩১ বার ব্যবহার করা হয়েছে। বর্তমানেও পৃথিবীতে প্রায় ত্রিশ লক্ষ কুরআনে হাফেজ আছেন । তারা মহাগ্রন্থ আল কুরআনের প্রায় ৬৬৬৬ টা আয়াত জের, জবর, পেশ, নোক্তা সহকারে মুখস্থ করেছেন। যদিও এটা আল্লাহর কালামের একটা মুজিজা আর তার পরেই আছে হাফেজদের বারংবার আবৃত্তি। সুতরাং মৌলিক বিষয়সমূহ বারবার আবৃত্তি করা দরকার।

Revise(পুনর্বিবেচনা করা, সংশোধন ও মানোন্নয়নের উদ্দেশ্যে পুনর্বার পড়া):

একটি বিষয় আত্মস্থ হওয়ার পর প্রথম কয়েকদিন কয়েক বার হেঁটে হেঁটে, সকালে মর্নিংওয়ার্কের ফাঁকে ফাঁকে বা পড়ার টেবিলে বসে চোখ বন্ধ করে, বই না দেখে রিভিশন দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। আর পরবর্তীতে তা আরো ভালভাবে ঝালাই করার জন্যই সম্ভব হলে সপ্তাহে একবার অথবা কমপক্ষে মাসে একবার রিভিশন দিয়ে তারপর না দেখে লেখা উচিত। দৈনিক কিছু কিছু আর রমজান মাসে তারাবিহ নামাজে সমগ্র কুরআনকে রিভিশন দিয়ে হাফেজরা এই বিশাল কুরআন মজীদকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মুখস্থ রাখছেন।

আজকে শুধুমাত্র আমেরিকায় চালু একটি আদর্শ সিস্টেমকে তোমাদের সামনে বিশ্লেষণ করলাম। এটিকে বাস্তবায়ন করা শুরু করো। দেখ তোমাদের কোন উন্নতি হচ্ছে কিনা?

এ পর্যায়ে একটি মজার কথা বলছি, যেটি বলেছেন ফ্রান্সিস বেকন, কতগুলি বইকে শুধু চাখতে হবে , কতগুলিকে গিলতে হবে এবং কিছুসংখ্যক বইকে চিবুতে ও হজম করতে হবে।” এখন দায়িত্বটা তোমাদের ঘাড়েই থাকলো, মগজ,বিবেক আর বড়দের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে হবে কোনটি কোন ধরনের বই। কারণ একটি ইটালীয় প্রবাদ হলো, “খারাপ বইয়ের চাইতে নিকৃষ্টতম তস্কর আর নেই ” সুতরাং সাবধান!

এবার একটা দু:খের কাহিনী বলতে চাই। কারণ সোনার চামচ মুখে দেওয়া মানুষ বেশি বড় হতে পারেনা। বরং যারা ব্যক্তি ও সমাজের দু:খ বুকে ধারণ করে তা প্রতিরোধে এক দুর্দমনীয় শক্তি নিজের ভিতর সৃষ্টি করতে পারে, ইতিহাস সাক্ষী তারাই হয় মহামানব।

এস এম আশিকুর রহমান। সে যশোর বোর্ডের অধীনে গত ‘৯৯ সালে এইচ এস সি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। সে লোহাগাড়া আদর্শ মহাবিদ্যালয় থেকে তিন বিষয়ে লেটারসহ ৮৭০ নম্বর পেয়েছে। কিন্তু হায় দুর্ভাগ্য! তার পিতা শেখ ফিরোজ আহমদ (বাদশা মিয়া ) সহায় সম্পদহীন, কপর্দকশূন্য এবং দিন এনে দিন খাওয়া এক সামান্য বর্গা চাষী। মা 'নুন আনতে পানতা ফুরায়’ এমন সংসারের গৃহিনী। গত পরীক্ষায় সে কোন প্রাইভেটও পড়তে পারেনি। আর এবার কোথাও ভর্তি হওয়াও সমস্যা। একটি প্রতিভা কি এমনি করেই ঝরে যাবে? আশপাশে ছড়িয়ে আছে এমন হাজারো আশিকুর। তাদের খোঁজ কর। তাদের হাত ধর ! সম্ভাব্য সহযোগিতা কর।


কেন ইংরেজি শিখবো

একটি গল্প বলছি শোন, আর ও হ্যাঁ, এটা একদম সত্যি গল্প কিন্তু! শোনই তাহলে ওহ ! কি, ভয়্ঙ্কর দাঁতালো ডাইনোসর ! মনে হয় যেন হঠাৎ কোন ভুতুড়ে গ্রহ থেকে লাফিয়ে পড়েছে। কিন্তু একি! ওর বিশাল পেটের নিচে একঝাক রং-বেরংয়ের শিশু দেখা যাচ্ছে। ওরা কারা? কি ওদের পরিচয়? সোনাঝরা রোদ্দুরের এক সুন্দর সকাল। সেদিন ছিল ক্যালেন্ডারের শেষ মাথায় ’৯৯ সালের বারোই অক্টোবর। তখন আগারগাঁওয়ের জাতীয় বিজ্ঞান যাদুঘরের সূর্যঘড়িতে সকাল নয়টা ছুইঁছুই করছে। হঠাৎ ক্যাচক্যাচ ব্রেক কষে প্রধান ফটকের সামনে থমকে দাড়ালো একটি ক্রীম কালারের টয়োটা হায়েছ। আর তার দরজাটি খুলতেই যেন টর্ণেডোর বেগে বেরিয়ে এলো একঝাক রঙ্গিন প্রজাপতি। আর উড়ে বেড়াতে লাগলো বিজ্ঞান যাদুঘরের প্রজেক্টসমুহের এ মাথা থেকে ও মাথা। মুখে তাদের খৈ ফোটার মতই বাংলা ইংরেজি প্রশ্ন। তাদের উত্তর দিয়ে শান্ত করতে রীতিমত গলদঘর্ম হচ্ছে যাদুঘরের কর্মকর্তারা। হয়তো কর্মকর্তাদের ঠোঁটের কাছে কান পাতলেই শোনা যেত বিড়বিড়ে উচ্চারন ‘উফ কি বিচ্ছুদের পাল্লায় পড়েছিরে বাবা ! হ্যাঁ ,এটা হলফ করে বলা যায় , তাদের ইংরেজি প্রশ্নবানে জর্জরিত কোন সাধারণ ব্যক্তিই এ কথা বলতে বাধ্য। এরা সাধারণের কাছে ঐ বিজ্ঞান যাদুঘরের ডাইনোসরের চাইতেও শক্তিশালী। এর কারণ একটিই , বাংলার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজির ওপর এদের দক্ষতা। ওরা কারা ?

কি ওদের পরিচয়? ওরা হচ্ছে ইসলামী ব্যাংক স্কুল এন্ড কলেজ (ইংলিশ মিডিয়াম) এর প্লে গ্রুপ থেকে কেজি পর্যায়ের ছাত্রছাত্রী। যাদের বয়স মাত্র চার থেকে সাত সাত বছরের ভিতরে। ওরা ইংরেজি শুধু পড়তেই পারে তাই নয়, বরং বলতে পারে, লিখতে পারে, আরেকজনের কথা বুঝতে পারে এমন কি আবৃত্তি কিংবা গানও গাইতে পারে। অনেকেই বলেন ইংরেজি শিখলে মানুষ বিদেশীদের মতোই চরিত্র শূন্য হয়ে যায়। এমনকি তাদের ধর্মও নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এরা এদের অবস্থা কি? এরা নামাজ পড়ে , গজল গায় আর সত্যিই সুন্দর চরিত্রের অধিকারী। এরা বর্তমানে আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজি শেখার পাশাপাশি শিখছে মহাবিশ্বের আদর্শ ইসলাম ।

তোমরা হয়তো ভাবতে পারো হঠাৎ বৃটিশ -ভারতের শিক্ষা উপদেষ্টা জন ম্যাকলের মতো আমিও কেন ইংরেজির পক্ষে ওকালতি করছি। আসলে কারন দুটি সম্পূর্ন ভিন্ন। জন ম্যাকলে চেয়েছিলেন তৎকালীন ভারতবর্ষকে শাসন করার জন্য এমন একদল ইংরেজি শিক্ষিত লোক তৈরী করতে যারা রক্তে বর্ণে হবে ভারতীয় কিন্তু চিন্তায় কর্মে হবে বৃটিশ। এককথায় বৃটিশদের দালাল। আর আমরা চাই মানুষের জ্ঞান, যোগ্যতা আর অভিব্যক্তি প্রকাশে যেহেতু ভাষার কোনই বিকল্প নেই সুতরাং শক্তিশালী ভাষাসমুহ আমাদের আয়ত্তে থাকা দরকার। আচ্ছা বন্ধুরা, তোমরা কি জান বর্তমান বিশ্বের সর্বাধিক মানুষ কোন ভাষায় কাথা বলে ? চোখ বন্ধ করে একটু চিন্তা করেই দেখনা। কি খুঁজে পেলে মনের বিশাল ভুবনে এর উত্তর? আচ্ছা বলছি তাহলে শোন, সেটি হচ্ছে মান্দারিন (চাইনিজ ) ভাষা। উহ্! আবার নাক সিটকে বলো না “কি এক বিদঘুটে ভাষার নাম বল্লেন জীবনে শুনিনি।”

আসলে জাতি হিসাবে সংখ্যায় চাইনিজরা বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ (প্রায় সোয়া’শ কোটি ) হওয়ায় এ ভাষার অবস্থা এমন। কিন্তু জাতি হিসেবে দেখলে দেখা যাবে পৃথিবীতে ইংরেজ ভাষাভাষীর সংখ্যা সর্বাধিক। অপরদিকে বিশ্বের প্রায় সকল জাতিই তাদের দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে ইংরেজির ব্যবহার করে থাকে। সে হিসাবেই ইংরেজি এখন আর শুধুমাত্র ইংরেজদের ভাষা নয় বরং বিশ্বজনীন ভাষা। অপরদিকে যে মিডিয়া ও তথ্যপ্রযুক্তি আজ নিয়ন্ত্রণ করছে সারা পৃথিবী তার পঁচানব্বই ভাগই ইংরেজিতে। শুধু কি তাই, ব্যবসা বলো, উচ্চশিক্ষা বলো, যোগাযোগ বলো, বিজ্ঞান বলো, সাহিত্য বলো সব কিছুর সিংহভাগ ইংরেজি ভাষার করায়ত্তে। এমনকি এশিয়ার প্রথম নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও গীতাঞ্জলীর জন্যে নোবেল পুরষ্কার পেতেন না যদি না তা অনূদিত হতো ইংরেজি ভাষায়। এক কথায় ইংরেজি ছাড়া বর্তমান বিশ্ব অচল। আমি বলছি না তোমাদের প্রত্যেকেই ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতো বহুভাষাবিদ হতে হবে। তবে বাংলার পাশাপাশি একজন যোগ্য মানুষ হিসেবে তোমাদের ইংরেজি জানা দরকার। ঠিক তেমনি একজন মুসলিম হিসেবে জানা দরকার কুরআনের ও জান্নাতের ভাষা আরবি। আর তোমাদের আরবি শেখার সবচেয়ে উপযুক্ত মাস হচ্ছে রমজান মাস। যেহেতু রমজান মাস কুরআন নাজিলের মাস , রহমত ও বরকতের মাস সুতরাং এ মাসে আরবি এবং সহীহ কুরআন তেলাওয়াত শেখা সবচেয়ে সহজতর। তবে আজকে আমরা ইংরেজির গুরুত্বের বিষয়েই কথা বলবো। আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন ভাষা শিক্ষার গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেছেন “আল্লামাহুল বায়ান ’ অর্থাৎ তিনি মানুষকে কথা বলার (ভাষা ব্যবহারের ) শিক্ষা দিয়েছেন। রাসূল (সা) তাঁর নিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী যায়েদ ইবনে সাবেত আনসারীকে ইহুদীদের ভিতর দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার জন্যে তাদের ভাষা হিব্রু শিখতে বলেন। যায়েদ (রা) মাত্র তেরদিনে হিব্রু ভাষা আত্মস্থ করেন। তিনি অপরাপর চারটি ভাষায়ও কথা বলতে পারতেন । সুতরাং বর্তমান সময়ে ইসলামকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ইংরেজি ভাষা জানা দরকার। বিশ্ববিখ্যাত , জ্যামিতির জনক পিথাগোরাস বলতেন, ‘মানুষের জীবন অলিম্পিক গেমসের মতো। কিছু লোক পুরস্কার নেয়ার জন্যে মাঠে খেলতে নামে, অন্যরা দর্শকের কাছে ছোটখাট রঙচঙে জিনিস বিক্রি করে সামান্য লাভের আশায়। আর এক ধরনের লোক আছে যারা কিছু চায় না , কেবল তামাশা দেখে ’কিশোর বন্ধুরা , তোমাদের ভাবতে হবে তোমরা কোন দলে থাকতে চাও!

১. চ্যাম্পিয়ান হওয়া প্রত্যাশী খেলোয়াড়দের দলে ?
২. সামান্য লাভ প্রত্যাশী বিক্রেতাদের দলে ?
৩. শুধু হাততালি দেয়া দর্শকদের দলে ?

যদি, চ্যাম্পিয়ান হওয়া প্রত্যাশী খেলোয়াড়দের দলে যেতে চাও তাহলে কষ্ট করতে হবে, সাধনা করতে হবে। একটি করুণ ঘটনার কথা তোমাদের বলছি, তোমাদের কি মনে আছে ১২ নভেম্বর ১৯৯৭ সালে ভারতের মাটিতে দুটি সৌদি ও কাজাখস্তানের বিমান মুখোমুখি সংঘর্ষে বিধ্বস্ত হয়? এতে উভয় বিমানের প্রায় ৩৪৯ যাত্রীর সবাই মারা যায়। তোমরা কি জান এ সংঘর্ষের কারণ কি? কাজাকাস্তানের পাইলটকে কন্ট্রোলরুম থেকে বলা হয়েছিল সে যেন তার বিমানকে আরও ওপরে না তুলে, কারণ সেই সমান্তরালে একটি সৌদি বিমান আসছে। কিন্তু কি দুর্ভাগ্য! কাজাখ পাইলট ইংরেজি সেই নির্দেশটি বুঝতে পারেনি। যার ফলে এই ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ।

করুণতম ঘটনা বলছি , তোমরা তো জানই ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা শহরে আমেরিকা ছুড়ে মারে বিশ্বের সর্বপ্রথম এটমবোমা 'লিটলবয়'। কিন্তু তার পিছনে কারণ ছিল কয়েকদিন আগে মার্কিন নৌবন্দর পার্লহারবারে জাপানের ধ্বংসযজ্ঞ। আর তার পিছনে কারণ ছিল ঐ ইংরেজি না বুঝা। মিত্রবাহিনীর একটি গোপন বেতারবার্তা জাপানীরা ধরতে পেরেছিল। কিন্তু তার কয়েকটি শব্দের (ইংরেজি অর্থ) তারা ভুলভাবে বুঝেছিল। ফলে তারা ধরে নেয় আমেরিকা পার্লহারবার থেকে জাপান আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর এই ইংরেজি না বুঝে, ভুল ধারণার ভিত্তিতেই তারা আগেভাগে পার্লহারবারে হামলা করে। যার ফলশ্রুতিতেই সংঘটিত হয় স্মরণকালের ভয়াবহতম হিরোশিমা ও নাগাসাকির বোমা হামলা। সুতরাং বুঝতেই পারছো বর্তমান সময়ে ইংরেজি না জানাটা শুধু উন্নতি থেকে পিছিয়ে থাকাই নয় বরং অনেক ক্ষেত্রে আত্মহত্যারও শামিল। গুরুত্ব নিয়ে এত আলোচনার পর হয়তো তোমরা রাগ করে বলছো ঢের হয়েছে আর দরকার নেই । এখন মনে হয় তোমাদের প্রশ্ন থাকবে বরং বলুন কিভাবে শুরু করা যায়। আসলে এ শুরু করার বিষয়টিই কিন্তু কঠিন । কয়েক বছর আগে ইতালীতে দুই বন্ধুর ভিতর ‘ডিম আগে না মুরগী আগে ’ এ নিয়ে প্রথমে বিতর্ক , অতঃপর ঝগড়া তারপর একজন কর্তৃক আরেক প্রিয় বন্ধুকে গুলি করে হত্যা ..। সুতরাং এখানেও ইংরেজি বিশেষজ্ঞদের ভিতরে বিতর্ক , গ্রামার আগে না স্পোকেন আগে ? আমি গরীব মানুষ (ইংরেজিতে) তাই এ ধরনের উচ্চাঙ্গের বিতর্কে জড়াতে চাই না। তবে সব কিছুরই একটি প্রাকৃতিক দিক আছে যেমন একটু চিন্তা করলেই আমরাই খুঁজে পাব কিভাবে আমরা ছোট্টবেলায় ভাষা শিখেছি। যেমন আমরা যখন কথা বলি তখন ছোট্ট শিশুরা চোখ বড় বড় করে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, তার মানে মনোযোগ দিয়ে শোনে। তারপর ধীরে ধীরে মা- আ, মামা ,আল্লা-হ ইত্যাদি শব্দ দিয়ে তার কথা বলা শুরু করে। এর অনেক পরে সে পড়তে শিখে, ধীরে ধীরে লিখতে এবং সবশেষে গ্রামার অর্থাৎ নিয়মকানুন । একথাটি প্রমাণের দরকার নেই, একটি ছোট্ট শিশুর দিকে তাকালেই বুঝা যায়। আমরা সকলেই, মাতৃভাষা শিক্ষার এ পদ্ধতি অবলম্বন করেছি। সুতরাং আমরা ইংরেজিও শিখবো প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে।

১. বেশি বেশি শোনা : (বিটিভি নিউজ ,বিবিসি, সিএনএন, স্পোকেন ক্যাসেট )
২. ভুল হোক শুদ্ধ হোক বেশি বেশি বলা : এজন্যে নির্দিষ্ট পার্টনার থাকলে এবং সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন পর্যালোচনা বা বিতর্কের ব্যবস্থা থাকলে ভালো হয়।
৩. না বুঝলেও পড়া: পাঠ্যবই , প্রতিদিনই নিউজ পেপার , বিশ্বের সেরা সেরা লেখকদের লেখা গল্পের বই ইত্যাদি পড়া।
৪. বেশি বেশি লেখা : বন্ধু –বান্ধবদের কাছে চিঠিপত্র , পত্রিকায় চিঠিপত্রের কলামে নিয়মিত লেখা।
৫. শব্দভান্ডার বাড়ানো : প্রতিদিন কমপক্ষে ১০টি শব্দ মুখস্থ করা এবং নিয়মিত সেগুলির ব্যবহার করা ।
৬. মাঝে মাঝেই গ্রামার দেখা : লেখনী , কথাবার্তাকে সঠিক রাখার জন্যে মাঝে মাঝেই গ্রামার বই দেখা জরুরি।

নিজের নামটি পর্যন্ত আমাদের বলেনি। তবু আমাদের বন্ধুত্বের হাত ওর দিকে প্রসারিত থাকবে। কেননা, আমরা যে ভালবাসা দিয়ে বিশ্বটাকে জয় করতে চাই। ওর একটি মৌলিক গুণ আছে- ও মারাত্মক সাহসী , এক্কেবারে দুর্ধর্ষ সাহসী।
দেখই না সুমোকুস্তির দীর্ঘদিনব্যাপী বিশ্বচ্যাম্পিয়ান দানবাকৃতির কোনিশিকিকে সে কেমন করে মুখ ভেংচে চ্যালেঞ্জ করেছে। ভাবখানা এই “ব্যাটা তোমাকে আমি কুচ পরওয়ানেহি করি ।” তোমাদের কিন্তু আমি বলবো না তোমরাও এই বিচ্ছুটির মতো রাস্তা ঘাটে বড়দের এমন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মারো। বরং তোমাদের আজ বলবো তার চাইতেও একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার জন্য। কি বলো , পারবে ? কারণ আমি যাদের নিয়ে লিখছি, তাদের ভিতর থেকেই বেরিয়ে আসবে নতুন সহস্রাব্দের আলী ,খালিদ , তারেক , মোহাম্মদ ইবনে কাসেম এবং সুমাইয়া , জয়নব , আয়েশা ও ফাতেমা। সুতরাং তাদের অভিধানে অসম্ভব বলতে খুব কম বিষয়ই আছে। যাদের চিঠিতে নীল নদের শুকিয়ে যাওয়া পানি প্রবাহিত হতো, যাদের তাকবীরে পারস্যের অপ্রতিহত স্রোতস্বিনী পরাজিত হতো। যাদের ঘোড়ার খুরের দাপটে পৃথিবী প্রকম্পিত হতো, তারা কি এক আল্লাহ ছাড়া আর কোন কিছুকে ভয় পেতে পারে? অসম্ভব - এটি হতেই পারে না। তো ,থাক এত্তোসব কথা। তোমাদেরকে যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার আহবান আমি জানাতে চাই সেটি হলো –একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ।

অবশ্য ,এ কথাটি বুঝে না বুঝে অনেকেই বলে। এর অর্থ কি? এর অর্থ সংক্ষেপে বলা খুবই কঠিন । তবু চেষ্টা করা যাক, কেমন? সেটি হলো এই আজকে যারা বিশ্বকে শাসন করছে সেই পাশ্চাত্য, তাদের হাতে কোন শক্তিশালী বা সুন্দর আদর্শ নেই। তবু কেন তারা বিশ্বকে শাসন করতে পারছে ? কারণ তাদের আছে;

১. মানবীয় যোগ্যতা (যেমন ঐক্য , দেশপ্রেম , জ্ঞানস্পৃহা , সাধনা ,পর্যালোচনা করা এবং সমালোচনা গ্রহণের মানসিকতা ইত্যাদি )
২. কর্মের দক্ষতা (যেমন পরিশ্রমপ্রিয়তা , নিষ্ঠা, সময়ানুবর্তিতা ,দায়িত্ববোধ ইত্যাদি)
৩. প্রযুক্তির শক্তি (যেমন কম্পিউটার , মিডিয়া , কমিউনিকেশন ইত্যাদি )

আর আমাদের হাতে আছে বিশ্বের সবচাইতে শক্তিশালী আর সুন্দরতম আদর্শ আল ইসলাম । তবু কেন আমরা পাশ্চাত্যের দ্বারা নির্যাতিত , পর্যুদস্ত -কিংবা কমপক্ষে তাদের মুখাপেক্ষী এর কারণ,

১. আমাদের মানবীয় যোগ্যতা কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ বিকশিত হয়নি।
২. আলস্য বা দায়িত্বানুভূতির অভাবে কর্মের দক্ষতা সৃষ্টি হয়নি।
৩. প্রযুক্তির শক্তি যেমন কম্পিউটার , মিডিয়া , কমিউনিকেশন ইত্যাদি নেই বললেই চলে।

ভাইবোনেরা , তোমরা তো জানো আজ প্রযুক্তির উন্নয়ন হচ্ছে রকেটের গতিতে, আর মানবীয় চরিত্র আর ভালোবাসার পতন হচ্ছে উল্কার গতিতে। আজ আকাশছোঁয়া অট্টালিকা হচ্ছে কিন্তু কোন ঘরেই মানসিক প্রশান্তি নেই। মঙ্গলগ্রহের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে কিন্ত , নিজের প্রতিবেশী এমনকি নিজের স্বজনদের সাথে কোন যোগাযোগ নেই। তাই যেমন প্রযুক্তির উন্নয়ন হচ্ছে ব্যাপকভাবে ঠিক তেমনি পাল্লা দিয়ে হতাশা , অশান্তি আর হত্যা আত্মহত্যার হারও বেড়েছে। এর কারণ একটিই, বর্তমান পৃথিবীর শাসকরা বস্তুগত ও প্রযুক্তিতগত উন্নয়নের প্রতি নজর দিলেও মন ও আত্মার উন্নয়নের দিকে তারা কোনই নজর দেয়নি। তাই অনেকে আক্ষেপ করে বলেন “বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে বেগ কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ ।” আসলে দোষটা বিজ্ঞান ব্যাটার নয়। বরং যারা বিজ্ঞান চর্চা করেছে তাদের । কারণ তারা বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের যোগ করতে পারেনি অথবা দোষটা আমাদের যারা ধর্ম পেয়েছি কিন্তু এর সাথে বিজ্ঞানকে যুক্ত করিনি।

সুতরাং একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ হলো এই-

১. হয় ,বিশ্ব প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন সত্ত্বেও হতাশা , মারামারি , হানাহানিতে ধ্বংস হয়ে যাবে।
২. অথবা , আমাদের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে - যাদের হাতে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আদর্শ ইসলাম আছে। যাতে করে আমরা এর সাথে বিজ্ঞানের সমন্বয় এবং তা প্রয়োগ করতে পারি।

সুতরাং আমাদের জন্য একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ হলো ইসলামের শক্তিকে আরো সতেজ করার পাশাপাশি , বিশ্বমানের যোগ্যতা , দক্ষতা আর প্রযুক্তির উন্নয়ন সাধন। যাতে করে আর ধ্বংসোন্মুখ পাশ্চাত্যের মুখাপেক্ষী নয় - বরং আমরাই দিতে পারি বিশ্বে আবার নেতৃত্ব। শুধু নেতৃত্ব লাভের জন্যই কি এটা দরকার ? না, বরং বিশ্বমানবতার কল্যাণ ও অনাবিল শান্তির জন্যই এটা দরকার। কি, প্রিয় ভাইবোনেরা তোমরা কি পারবে আজকের বিশ্বেও শাসক পাশ্চাত্যের মোকাবেলায় যোগ্যতা অর্জনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে ? হ্যাঁ তোমাদের পারতেই হবে এবং তা এখন থেকেই শুরু করতে হবে। কারন বিশ্ব আজ তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। প্যারাডাইজ লস্টের কবি, মহাকবি মিল্টন বলেছেন : The childhood shows the man as morning as morning shows the day.

এসো আবার তাকাই এই ক্ষুদে সুমো কুস্তিগীর দিকে, সে যেমন সাহস নিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কোনিশিকির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে; চ্যালেঞ্জ করেছে; আমরাও ঠিক তেমনি যোগ্যতা অর্জনের যুদ্ধে শক্তিশালী পাশ্চাত্যকে অনুকরণ করবো না , বরং

তাকে হারিয়ে দেব , তাকে চ্যালেঞ্জ করবো। সবাই বলো , ইনশাআল্লাহ।

অধিকাংশ সময় একটা সত্য-কৌতুক দিয়ে শুরু করা আমার বদ অভ্যাস। আজকেও তার ব্যতিক্রম করার ইচ্ছে নেই। তবু; একটু ব্যতিক্রম , কৌতুকটা হবে সবার শেষে। আটটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা জাপানের দক্ষিণের দ্বীপ ওকিনাওয়ার নাগো শহরে মিলিত হন। এই আটটি দেশকে বলা হয় জি এইট (জি-৮)। তোমাদের মনে রাখার সুবিধার্থে দেশগুলির নাম বলছি আমেরিকা, জাপান, কানাডা , বৃটেন , ফ্রান্স , ইটালী , জার্মানী ও রাশিয়া। যদিও গত পাঁচ বছর জাপানে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে তবুও সামিটের আয়োজনে রেকর্ড পরিমাণ টাকা ব্যয় করা হয়। বৃটেনের টেলিগ্রাফ লিখেছে, এর আগে জি এইট সামিটে অন্যান্য দেশে যত টাকা ব্যয় করা হয়েছিল জাপান এবার তার পঞ্চাশ গুন বেশি খরচ করেছে। এ ব্যয়ের পরমাণ হলো ৮০ বিলিয়ন ইয়েন অর্থাৎ ৫০০মিলিয়ন বৃটিশ পাউন্ড। তোমরা জানতে চাও বাংলাদেশী টাকায় কত হতে পারে ? প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। এ পরিমাণ টাকা দিয়ে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলির প্রায় সোয়া কোটি শিশুর শিক্ষার খরচ চালানো যেত । এটাও এক ধরনের কৌতুক বটে! যে একেকজন রাষ্ট্রপ্রধানের পিছনে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৫ লক্ষ দরিদ্রশিশুর সার্বিক শিক্ষার ব্যয় । এবার চলো ধনাঢ্যতায় হিমালয় সমান সেই জাপানের আরেকটা চিত্র দেখি। সামিটের মাস খানেক আগে জাপানের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মি. মোরি গিয়েছিলেন জি এইটের লিডারদের ফর্মাল দাওয়াত দিতে এবং যে সব বিষয়ে আলোচনা হবে তার আইডিয়া দিতে। তখন তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের সাথে সাক্ষাৎ করেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এটাই ছিল তার ক্লিন্টনের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ। সাক্ষাৎকারের আগে মোরিকে তার সহযোগীরা পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রথম সাক্ষাতে মোরি যেন দু ’একটি কথা ইংরেজিতে বলেন। উল্লেখ্য, জাপানের প্রধানমন্ত্রী অন্য কোন দেশের নেতাদের সাথে কথা বলার সময় সর্বদা দোভাষীর সাহায্য নেন। যাই হোক , মোরিকে কয়েকটি ইংরেজি বাক্য শেখানো হয়। আমেরিকায় গিয়ে ক্লিনটনের সাথে দেখা করার সময় মোরি প্রথম ইংরেজি বাক্যটিই শুদ্ধ করে বলতে পারেন। তাকে শেখানো হয়েছিল হ্যান্ডশেক করার সময় How are you বলতে। উত্তরে ক্লিনটন বলবেন , I am fine and you? মোরি সংক্ষেপে বলবেন Me too, এ পর্যন্তই। তারপর দোভাষীর মাধ্যমে কথা বলবেন। তিনি যখন ক্লিনটনের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করছিলেন তখন মোরি বলেন, Who are you ? ( তিনি How ভুলে গিয়ে Who বলে ফেলেন ) বিচক্ষণ ক্লিনটন হেসে উত্তর দেন, I am husbend of Hillary (আমি হিলারীর হাসব্যান্ড) . মোরিও না বুঝে তোতাপাখির মতো তার শিখানো Me too! বলেন‌। (আমিও হিলারীর হাসব্যান্ড ) বলাই বাহুল্য , উল্লেখিত দুই নেতার এ আলোচনার কথা হাসতে হাসতে জাপান রেডিও -র একটি ন্যারেটর কৌতুক করে ২২ জুলাই ২০০০ তারিখ সকালে প্রচার করে। মোরির অবস্থা দেখে আমরাও মরি ! মরি ! তবে তার একটি গুণ স্বীকার করতেই হবে , সেই বেরসিক ন্যারেটরের চাকুরী খেয়ে তাকে তিনি জেলে পুরেননি। আমাদের দেশে হলে বেচারার কি যে হতো আল্লাহ মালুম । ভুল সবারই হতে পারে কিন্তু এখানেই হলো উন্নত দেশের সাথে আমাদের পার্থক্য।

যে কোন ভাষা ভালভাবে আয়ত্ত করার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার ভোকাবুলারী বা শব্দ ভান্ডার। তারপর শব্দ সাজিয়ে বাক্য তৈরি সে তো তোমাদের জন্যে নস্যি ! তাই না ? তোমরা তো জান কোন কাজ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করলে তাতে বরকত হয় । আর সেই বিসমিল্লাহর প্রতীক হচেছ ১৯। এবার এসো, আমরাও ইংরেজিতে ভাল কথাবার্তা বলা বাড়ানোর জন্য ১৯টি ম্যাজিক ফর্মূলাই আলোচনা করি :

১. ভোকাবুলারী বাড়ানোর জন্য “জুনিয়র ওয়ার্ড মাস্টার গেম” খেলা যা ঢাকার নীলক্ষেতে পাওয়া যায় ।
২. ইংরেজি পত্রিকা পড়ে তার অপরিচিত শব্দগুলি দাগিয়ে রাখা এবং ডিকশনারীতে থেকে শেখা ।
৩. একই সাথে একটি শব্দের নাউন , ভার্ব ও এডজেক্টটিভ শেখা; খাতার ভিতর সারি সারি করে লিখে শিখলে আরো ভাল হয় ।
৪. বিভিন্ন লেখালেখিতে প্রতিনিয়ত নতুন শব্দ লেখা এতে করে বানান শুদ্ধ হবে।
৫. কমপক্ষে প্রতিদিন ৫টি করে নতুন শব্দ শেখা, যা টুকরো কার্ডে লিখে সর্বদা শার্টের পকেটে রাখা যেতে পারে।
৬. নিয়মিত নিউজ এট টেন এবং বি.বি.সি এর ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের ইংরেজি খবর শোনা ।
৭. বিদেশীদের সাথে কথা বলার সকল সুযোগ কাজে লাগানো।
৮. ব্যক্তিগত সকল কর্মসূচি বা বাজারের তালিকা ইংরেজিতে করা ।
৯. কোন ভাল কার্টুন বা প্রামাণ্য অনুষ্ঠানের ভিডিও বারবার দেখা।
১০. কিছু ইংরেজি কবিতা , গান বা উদ্ধৃতি মুখস্থ করা এবং কথাবার্তায় কাজে লাগানো ।
১১. একটি ভোকাবুলারী নোট খাতা বানানো এবং অবসরে পড়া , যেমন বাসের জন্যে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় বা যানজটে পড়ে।
১২. একজন বিদেশী ফ্রেন্ড তৈরি এবং তার সাথে নিয়মিত চিঠি যোগাযোগ করা।
১৩. একটি কমিক বুক বা পিকচার বুক সংগ্রহ করে ইংরেজিতে তার বিবরন দেয়ার চেষ্টা করা ।
১৪. সর্বদাই একটি পকেট ডিকশনারী কাছে রাখার চেষ্টা করা এবং তা কাজে লাগানো ।
১৫. প্রায়ই ইংরেজি ভদ্রতাসূচক বাক্যগুলি ব্যবহার করা ; যেমন স্যরি ,থ্যাংক ইউ, ওয়েলকাম, হাউ আর ইউ।
১৬. একটি ইংরেজি রেডিও প্রোগ্রাম রেকর্ড করা; তার সংক্ষিপ্ত অংশ শুনে তা বন্ধ করে , নিজে বলার চেষ্টা করা ।
১৭. সহজ ইংরেজি গল্পের বইগুলি পড়া।
১৮. নিজের পরিবারের ভিতরে এবং বন্ধুদের নিয়ে একটি গ্রুপ করে স্পোকেনের নিয়মিত র্চচা করা ।
১৯. এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট মাসিক পরিকল্পনা নেয়া এবং প্রতিদিন শোয়ার সময় ও সপ্তাহে কমপক্ষে একবার সময় নিয়ে তার পর্যালোচনা করা।

আল্লাহ আমাদের বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ইংরেজি ভাষা ভালভাবে আয়ত্ত করার তৌফিক দিন।

এবার তোমাদেরও তিনটি সহজ কুইজ ধরবো। আশা করি পারবে । কুইজ গুলি নিম্নরূপ ;

১. ইংরেজিতে সবচেয়ে বড় অর্থবোধক শব্দটি কি ?
২. সবগুলি ইংরেজি বর্ণমালা একে একে ব্যবহার করে একটি অর্থবোধক বাক্য তৈরি করা।
৩. বৃটেনের কোন রানী ভাল ইংরেজি বলতে পারতেন না ? এবং কেন ?

যে যত ভাষারই পন্ডিত হোকনা কেন ছোট্টবেলায় মায়ের মুখ থেকে শেখা ভাষায়ই তার সবচেয়ে আপন ভাষা, সবচেয়ে শুদ্ধ ভাষা , যে ভাষায় সে কাঁদে যে ভাষায় হাসে। তোমরা তো জান সেই ১৭৫৭ সালে বৃটিশরা বাংলা দখল করেছিল। কেড়ে নিয়েছিল আমাদের মাতৃভাষা আর ইংরেজিকে আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল। আর আজ আড়াইশ বছরের ব্যবধানে বাংলা হানা দিয়েছে খোদ ইংরেজদের জন্মভূমিতে। শোন ছোট্ট দু’টি সত্য ঘটনা:

(এক) রংপুরের সাড়ে ৩ বছরের প্রতিভাবান ছোট্ট মেয়ে মাহজেবিন ইসলাম মৌ; ১ মি: ৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে ১০৯টি মৌলিক পদার্থের নাম বলতে পারে এর ভিতর হাইড্রোজেন থেকে সর্বশেষ আবিষ্কৃত মৌলিক পদার্থ মিটানেরিয়াম পর্যন্ত আছে।

(দুই) আমার এক ছোট্ট ভাগ্নি তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রী মুমতাহিনা নূর ছন্দ, কিশোর কন্ঠের এক পাগলী পাঠক। হাতে পাওয়া মাত্রই হাপুস হুপুস সব গল্পগুলি সাবাড় করে ফেলে ? তার পেটে প্রায় একশটির ওপর গল্প আছে। সেদিন আমাকে কাছে পেয়েই সে বন্দি করে ফেললো । অতঃপর সারা দিনে শুনিয়ে দিল প্রায় ১৭টির ওপর গল্প। শুধু কি তাই ? সে একজন ক্ষুদে কবিও বটে ; ফারজানার উপহার দেওয়া প্যাডের ভিতর সে টুকটুক করে লিখে দিল একটি মজার ছড়া

ছোট্ট পাখি ছোট্ট পাখি

আমার কাছে আয়না

তোকে আমি দেব

হাজার টাকার গয়না।

আমার বিশ্বাস তোমরা সবাই চেষ্টা করলে এর চাইতেও ভালো প্রতিভার পরিচয় দিতে পারবে। এবার চলো আমরা কাজের কথায় চলে আসি। আল্লাহর রাসুল(সা) এক হাদিসে বলেছেন , “তোমরা জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনে চীন দেশে যাও ”। তোমরা কি জান চীন দেশ কোন দিকে ? ঠিক আমাদের উত্তরে সুবিশাল হিমালয় আর তিব্বত মালভূমিরও উপরে। আচ্ছা এখনই তোমাদের একটি কুইজ ধরি , কি ভয় পেয়ে গেলে ? নাহ্ তোমরা তো সাহসী সেনা ভয় পেলে তো চলবে না। আচ্ছা বলো তো চাঁদ থেকে পৃথিবীর কোন স্থাপত্য কর্মটি দেখা যায়। এক.... দুই . . . তিন মিনিট -কি পারলেনা ! তবে শোন সেটি হচ্ছে চীনের মহাপ্রাচীর। সেই চীন দেশের এক যুবক নাম তার লী ইয়াং। তিনি যখন লেনযুয়া একাডেমীতে পড়তেন , তখন পরীক্ষায় ইংরেজিতে ফেল করেন। তোমরা হয়তো বলবে এটা আবার একটা ঘটনা হলো ? নাহ্ এর পরেই আছে মজার ঘটনা। ফেল করে সে গেল মহাক্ষেপে। এরপর ইংরেজিকে মজা দেখানোর জন্য যার সাথেই দেখা হয় শুধু ইংরেজিতে কথা বলে এমনকি গাছ , লাইটপোস্ট পর্যন্ত তার বিশৃংখল ইংরেজি শোনা থেকে রেহাই পায়না। অনেক অনেকদিন পর আজ তার কি অবস্থা জানো? চীনে সে আজ প্রায় ৩০ হাজার মানুষের সরাসরি ইংরেজি শিক্ষক। আর পরোক্ষভাবে তার কাছে শিক্ষা নিয়েছে প্রায় ১০ কোটি ৪০ লক্ষ চীনা নাগরিক।

সুতরাং আমরাও সিরিয়াসলি চেষ্টা করলে এমনটি হতে কেন পারবো না ! এসো আমাদের এই অভিযানকে আরো বেগবান করি , শুরু হোক আমাদের বিশ্বজয়ী সাধনা।

Your boss has a bigger vocabulary then you have

That’s one good reason why he's your boss.

মনোযোগ-সংযোগ

“আমেরিকার একটি শহরে উচ্চতর বিজ্ঞান কেন্দ্রে স্থায়ীভাবে বাস করার জন্য বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইনকে একটি চমৎকার বাড়ি দেওয়া হয়েছিল। একদিন নিকটবর্তী প্রিন্সটন কলেজে ফোন করে এক ভদ্রলোক একজন ডীনকে চাইলেন । ডীন ঘরে নেই শুনে তিনি তার সেক্রেটারির কাছে আইনস্টাইনের বাসার ঠিকানাটি জানতে চাইলেন। সেক্রেটারি সবিনয়ে জানালেন, দয়াকরে আমাকে মাফ করবেন , ড: আইনস্টাইন একটু নিরিবিলি থাকতে চান বলে ঠিকানা কাউকে দেয়া বারণ আছে । টেলিফোনের অপরপ্রান্তের ভদ্রলোক কিছুক্ষণ চুপ থেকে ফিসফিসিয়ে বললেন , মাফ করবেন ! আমি স্বয়ং আইনস্টাইন বলছি, বাসা থেকে একটু বেড়াতে বের হয়েছিলাম। এখন আমার বাসার ঠিকানাটি একদম ভুলে গেছি।

চলো আরেকটি গল্প পড়ি-

আজ থেকে প্রায় একশত পাঁচ বৎসর আগে ১৮৯৫ সালে সৈয়দ আব্দুস সামাদ জন্মগ্রহণ করেন। সামাদের আরেকটি ঘটনা রূপকথাকেও যেন হার মানায়। খোদ ফুটবলের জন্মস্থান বৃটেনের লন্ডন স্টেডিয়ামে তিনি খেলছেন। বৃটিশদের বিরুদ্ধে। বেশ দূর থেকে সামাদের একটি শট করা বল বৃটিশ পক্ষের গোলবারে লেগে ফিরে আসলো। কিন্তু সামাদ রেফারীর কাছে চ্যালেঞ্জ করে বসলো যে তোমাদের গোলপোস্ট অবশ্যই কিছুটা নিচু আছে , তাই আমি গোল দাবি করছি। প্রথমে রেফারী তার কথা হেসেই উড়িয়ে দিল , কিন্তু সে নাছোড়বান্দা। অবশেষে অনেক তর্কবিতর্কের পর রেফারী তাচ্ছিল্যের সাথে মেপে দেখলো । কিন্তু একি অবাক কান্ড ! দেখা যাচ্ছে সামাদের কথাই ঠিক। গোলবারটি প্রায় দেড় ইঞ্চি নিচু। এমতাবস্থায় বাতিল হওয়া গোলটি হিসাবে ধরা হলো। কিন্তু এই ঘটনা তৎকালীন ফুটবল বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করলো। এত সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম হিসাব কিভাবে সম্ভব? বিশ্ব ফুটবলারের ইতিহাসে এমন নির্ভুল শট এবং চ্যালেঞ্জ করার মতো ফুটবলার আজও জন্মায়নি। পাক্কা ছয় ফুট লম্বা এই ফুটবলের যাদুকর সম্পর্কে অনেক কিংবদন্তি ছড়িয়ে আছে। সেই ছোট্টবেলা থেকেই তিনি নাকি একটি টেনিস বল নিয়ে ড্রিবলিং করতে করতে সর্বত্র , মাঠে-ঘাটে যেতেন। এমনকি এমতাবস্থায় বাজার থেকেও ঘুরে আসতেন। এভাবেই বলের উপর তার চুম্বকের মতো প্রভাব তৈরি হয়েছিল। বল যেন তার পায়ে আঠার মতোই লেগে থাকতো। তিনি যেন সেই ইংরেজি প্রবাদটিই নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করেছিলেন Practice makes a man perfect .আইনস্টাইনের কৌতুক থেকে আমরা শিক্ষা পাই একজন মেধাবী লোকও যদি একটি সাধারণ বিষয়কে গুরুত্ব না দেয় তবে সেটি তার মনে নাও থাকতে পারে অপরদিকে ফুটবলের যাদুকর সামাদের জীবন থেকে আমরা শিক্ষা পাই একটি জটিল বিষয়কেও যদি খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়, বারবার চর্চা করা হয় তবে তা জলবৎ তরলং হয়ে যায়। এ দুটি বিষয়কে সামনে রাখলে আমরা মূলত: একটি বিষয়ের গুরুত্বকেই খুঁজে পাই সেটি হচ্ছে “মনোযোগ”।

তোমরা জান কি স্মরণশক্তি বা মেধা নামক গুপ্তধনের গোপন চাবিটি কি ? একটি চোখ বন্ধ করে ধ্যান করেই বলোনা ,কী পারছো না, চিচিং.....ফাক ? আরে সেতো আলী বাবা আর চল্লিশ চোরের ঘটনা। আসলে বিষয়টি কিন্তু আমরা একটু আগেই বলে দিয়েছি , কি এখন ধরতে পেরেছো ? হ্যাঁ সেটি হচ্ছে -মনোযোগ । ‘ইউজ ইউর মেমোরী ’ নামক গ্রন্থে লেখক বলেছেন “মানব মস্তিস্ক তথ্যে ভারাক্রান্ত হওয়া অসম্ভব , মানব মস্তিস্ক প্রতি সেকেন্ডে দশটির উপর ভিন্ন ভিন্ন আইটেম ধারণে সক্ষম।” তা সত্ত্বেও আমাদের স্মৃতি বিভ্রাটের কারণ কি, কেন মনে থাকেনা ? এর কারণ হচ্ছে হয়তো গুরুত্বহীনভাবে আমরা তথ্যগুলি গ্রহণ করেছি । হয়তো সে সময় আমরা অন্যমনস্ক ছিলাম বা অন্যকোন কাজে ব্যস্ত ছিলাম অথবা তড়িৎ গতিতে কাজটি করা হয়েছে । সে জন্য তথ্যগুলি মস্তিস্কের তথ্যব্যাংকে ঠিকভাবে সংরক্ষিত হয়নি। উপরোক্ত গ্রন্থে আরো বলা হয়েছে “ব্যতিক্রমী দু ’একজন ছাড়া বাকী সবার স্মৃতিশক্তি প্রায় একই ।” একটি মজার কথা বলছি। তোমরা এক্কেবারে থ বনে যাবে না তো ? তাহলে বলছি শোন, তোমাদের স্মৃতিশক্তি আইনস্টাইন ,নিউটন ,আর সক্রেটিসের তুলনায় কোন অংশেই কম নয়। তোমরা ভাবছো বেচারার মাথাটাই শেষতক তালগোল পাকিয়ে গেল কিনা? সত্যি বলছি , আমার মাথাটি একদম ঠিক আছে, আর কথাটি ঐ বিখ্যাত বই “ইউজ ইউর মেমোরী ’ এর বক্তব্য।। আসল ঘটনা হচ্ছে সবই মনোযোগের খেলা। আইনস্টাইন নিজের বাসার নাম্বারটিও মনে রাখতে পারেননি প্রয়োজনীয় গুরুত্ব ও মনোযোগ দেননি বলে। তেমনি আমরা যা পারি না তা এই মনোযোগের অভাবের কারণেই। এই মনোযোগ কাকে বলে ? সাধারন অর্থে ‘কোন বিশেষ বিষয়ের ওপর বিশেষভাবে মনোনিবেশ করাই মনোযোগ ’। যেমন আমাদের প্রিয় খেলা ক্রিকেটের কথাই ধরা যাক । যখন ওয়াসিম আকরাম বল করছে তখন আমাদের নজর থাকে শুধুমাত্র তার দিকেই , এরপর হয়তো প্রতিপক্ষের টেন্ডুলকারের ব্যাটের দিকে ‘অতঃপর বলটি যেদিকে ছুটে যায় সেদিকে । তখন কিন্তু অন্যান্য খেলোয়াড়দের প্রতি আমাদের তেমন নজর থাকে না যার ফলে ঠিক তখন তারা কে কি করছে আমরা বলতে পারবো না। বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী গিলফোর্ড বলেন, “মানুষ যা প্রত্যক্ষ করতে চলেছে তা নির্বাচন করার প্রক্রিয়াকেই মনোযোগ বলা হয়। তোমাদের কী সেইসব গোপন ফর্মূলা বলে দেব যার মাধ্যমে তোমরা তোমাদের সেই কাংখিত স্মরনশক্তির গুপ্তধনকে উদ্ধার করতে পারবে? কি বলবো? হ্যাঁ বলতে পারি তবে তার আগে কথা দিতে হবে এ ফর্মূলায় লেখাপড়া করে যদি তোমাদের রেজাল্ট ভাল হয় তবে কিন্তুšু— আমাকে ফুলপেট মিষ্টি খাওয়াতে হবে । কি ঠিক তো ? তাহলে এক এক করে বলছি শোন।

১. উজ্জ্বলতা : সাধারণের ভিতর একটি উজ্জ্বল জিনিস আমাদের মনোযোগ কাড়ে। সুতরাং আমাদের উচিত বই বা নোটের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমুহ রঙিন মার্কার দিয়ে দাগিয়ে পড়া ।
২. বিচ্ছিন্নতা : অনেক মানুষের ভীড়ে আলাদা একজনের প্রতি নজর পড়ে । ঠিক তদ্রƒপ কোন নোটের মৌলিক পয়েন্টগুলি আলাদা করে ডান পাশে লিখলে সহজেই মনোযোগ আকর্ষণ করে।
৩. ব্যবহার : একটি বিষয় ব্যবহার করলে তা সহজেই মনে থাকে। যেমন একটি মটর গাড়ির ইঞ্জিনিয়ারের চাইতে একজন সার্টিফিকেট ছাড়া মেকার মটরগাড়ির মেরামতের কাজ ভাল বুঝে। সুতরাং পড়া একটি বিষয়কে বারবার চর্চা এবং লেখার মাধ্যমে প্রয়োগ করলে তা সহজেই মনে থাকে।


ভাল রেজাল্ট করতে হলে

বিশ্ব বিখ্যাত ফরাসি নাট্যকার এবং হাস্যরসিক মঁলিয়ার (১৬২২-১৬৭৩) একবার সেরবোর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপককে গল্প শোনাচ্ছিলেন। গল্পটা এরকম “এক গন্ডমুর্খ ধনী জমিদার প্যারিস থেকে অল্পদিনের জন্য গ্রামের বাড়িতে এসেছেন। নিজের প্রিয় ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে তিনি গ্রামে বেড়াতে বের হয়েছেন । রাস্তার ধারে এক নতুন বাড়ি দেখে তিনি থমকে দাঁড়ালেন। সেখানে অনেক ছেলেমেয়ের ভীড় দেখে তার কৌতূহল হলো। একজন ছেলেকে ডেকে তিনি রাজকীয় গাম্ভীর্যে জিজ্ঞেস করলেন ‘এখানে কী হচ্ছে?

ছেলেটি বললো এটা বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে হাজার ফ্রা (ফরাসী মুদ্রা) জমা দিলে পি.এইচ.ডি. ডিগ্রি পাওয়া যায়। যারা হাতে বা পায়ের বুড়ো আঙ্গুলে টিপছাপ দিতে পারে তারা এক হাজার ফ্রা জমা দিলেই ডিগ্রী পেয়ে যায়। জমিদার তো বেজায় খুশি হয়ে ভেতরে গেলেন। কড়কড়ে একহাজার ফ্রা জমা দিয়ে ভিসির কাছ থেকে টিপছাপ দিয়ে ডিগ্রী নিয়ে এলেন। বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ তার মনে হলো হায়! আমি কি বোকা ,আমার ঘোড়ার জন্যও তো একটি ডিগ্রী আনতে পারতাম। যেই ভাবা সেই কাজ , ফিরে গিয়ে ভিসিকে বললেন, এই নিন আরো এক হাজার ফ্রা আমার ঘোড়া আশা করি অন্তত পায়ে টিপছাপ দিতে পারবে, সুতরাং তাকেও একটি ডিগ্রী দিন । কিছুক্ষণ জমিদারের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে অবশেষে ভিসি বললেন , স্যরি আমরা শুধু গাধাদেরই ডক্টরেট দিয়ে থাকি , ঘোড়াদের দিই না।

তোমাদের এক ভুবনবিজয়ী হাসিমাখা অথচ প্রতিভাদীপ্ত ক্ষুদে মুজাহিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি; হস্ত লেখা প্রতিযোগিতায় সে পরপর কয়েক বছর তার গ্রুপে জেলা চ্যাম্পিয়ান । সাইক্লিং , ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট প্রভৃতিতে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সমবয়সীরা তো বটেই বড়োরাও পর্যন্ত ভয় পায়। বইয়ের সাথে তার সম্পর্কটা চুম্বকের মতোই শক্তিশালী , তার বই পড়ার স্টাইল দেখলেই কেবল তোমরা বুঝতে। নাম তার যোবায়ের, হ্যাঁ , রাসূল (সা) এর ফুফাতো ভাই সাহাবা যোবায়ের (রা)-এর সে মিতা। আর তাই তো নামাজ কাজা হওয়া তো দূরের কথা বরং প্রতিমাসে তার কম ওয়াক্ত নামাজই জামায়াত ছাড়া পড়া হয়। এই বয়সেই তার আঠারোটি সূরা মুখস্থ আর তেলাওয়াতটা এতই সহীহ যে বড়রাও তার সামনে ইমামতি করতে ভয় পায় , পাছে কখন ইচড়েপাকার মতো লোকমা দিয়ে বসে। তোমরা হয়তো টিপ্পনী কেটে বলছো; হবে না তার তো লেখাপড়া নিয়ে আমাদের মতো এত টেনশন নেই। তবে শুনই না , তার সে অধ্যায়ের কাহিনী। সে তৃতীয় শ্রেণীর ফাস্টবয় , যদিও তার ক্লাসের সেকেন্ড বয়ের নামও যোবায়ের । কিন্তু উভয়ের প্রতি বছরের মার্কের পার্থক্য বেশ বড় রকমের , অর্থাৎ স্কুলজীবনের শুরু থেকেই বলা যায় সে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ওহ, ভাল কথা-সে একজন ক্ষুদে কবিও বটে , তার তিন মাসের আদরের ছোট বোনকে নিয়ে সে একটি ছড়া লিখেছে , মজার সেই ছড়াটি তোমাদের বলতে , লোভ সামলাতে পারছি না:

ছোট্ট বাবু তুলিমণি

সবাই ডাকে টুলিমণি;

সবসময় ভাল থাকে

রেগে গেলেই , জোরসে কাঁদে।

মাঝে মাঝে ভালো হয়ে যায়

তখনই সে আদর পায়

ঘুমের মধ্যেও থাকে হাসি

মাঝে মাঝে দেয় হাঁচি।

সুপ্রিয় ভাইবোনেরা তোমরা কি বুঝতে পেরেছো কৌতুক এবং যোবায়ের কাহিনীটি তোমাদের বলার মতলবটা কি? মতলব হচ্ছে তোমাদের সামনে এই সুত্রটা তুলে ধরা যে, আমাদের সমাজের কিছু লোক আছে যারা যোগ্যতা অর্জন ছাড়াই সেই মূর্খ জমিদারের মতো শুধু সার্টিফিকেট অর্জন করতে চায়, আমরাও তাদের মতো হলে চলবে না এবং এর পাশাপাশি আমাদের ছোট বেলা থেকেই ক্ষুদে যোবায়ের এর মতো বহুমুখী প্রতিভা বিকাশের দিকে নজর রাখতে হবে। প্রচন্ড জিনিয়াস বা স্মরণশক্তিসম্পন্নদের নিয়ে টানা দশ বৎসর সিরিয়াস গবেষণা করেছেন আমেরিকার এক্সেটার ইউনিভার্সিটির প্রফেসর মাইকেল হাও। এ বিষয়ের ওপর তিনি তার অবদানের জন্য পি.এইচ.ডি ডিগ্রীও পেয়েছেন। তিনি কিছু মারাত্মক কথা বলে সারা বিশ্বে ঝড় তুলেছেন সেগুলি হলো “সাধারণ মানুষ ও জিনিয়াসদের ভিতর কোন পার্থক্য নেই ।” তার মতে জিনিয়াসরা প্রত্যেকেই তৈরি হয় , পরিস্কার কথায় তারা ধীরে ধীরে নিজেরাই নিজেদের তৈরি করে নেন। তবে এ প্রসঙ্গে একটি বিষয়ের ওপর তিনি খুবই গুরুত্ব দেন, সেটি হলো পারিবারিক শান্তি । যে পরিবারে যত বেশি শান্তি আছে এবং যেখানে ছোট ছেলেমেয়েরা যতবেশি হাসিখুশি পরিবেশের মধ্যে বড় হতে পারে সে পরিবার থেকে ততবেশি জিনিয়াস জন্ম নেয়ার সম্ভাবনা বেশি । এ ক্ষেত্রে জীবন সঙ্গীর অনুপ্রেরণাও অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ । তিনি আরো বলেছেন পৃথিবীতে যারাই বড় কাজ করেন তার সব ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব। কেউ অলৌকিক শক্তির বলে কিছু করেন না। সব কিছুরই বাস্তব কারণ আছে। প্রফেসর হাও ব্রিলিয়ান্ট সাইন্টিফিক মাইন্ড নিয়েও কাজ করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গাছ থেকে আপেল পড়তে দেখেই নিউটন তার থিউরী পেয়ে যাননি বরং এর আগে নিউটন ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামিতির বিভিন্ন জটিল বিষয় গবেষনা করেছন। যখন তিনি আপেলটি পড়তে দেখেন তার কাছে একটি সমস্যা পরিস্কার হয়ে যায়। “আইনস্টাইন সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন , তার পরিবারে পরিবেশ ভাল ছিল এবং সেখান থেকে তিনি প্রচুর উৎসাহ পান যা তাকে জগৎবিখ্যাত হতে সহায়তা করে। প্রফেসর হাও এর মতে একজন মানুষের সাফল্যের মূল বিষয় হচ্ছে “ব্যক্তিগত পরিশ্রম, কাজ করার সুযোগ, পারিবারিক উৎসাহ এবং শান্তি।” তিনি আরো জোর দিয়ে বলেন পরিবারে টাকার চেয়ে শান্তির বেশি প্রয়োজন। এ কারণে সবারই উচিত পরিবারের দিকে লক্ষ্য রাখা। হয়তো এ কারণেই আমাদের দেশে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে, ‘যে সংসার চালাতে জানে সে দেশও চালাতে জানে। ’ প্রফেসর হাও তার নিজের লেখা বই ‘হাউ টু বি এ ক্রিয়েটিভ জিনিয়াস ইন টেন ইজি স্টেজেস ; ‘গিভ ইউর চাইল্ড এ বেটার স্টার্ট ’ জিনিয়াস এক্সপ্লেইন্ড এগুলিতে তিনি আরো বিস্তারিতভাবে উপরোক্ত বিষয়গুলি উল্লেখ করেছেন। যা আমাদের তো বটেই , আমাদের পিতামাতা ও শিক্ষকদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তোমাদের অনেকেরই তো বেশ আগেই এস.এস.সি এবং দাখিল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আমরা শুনতে পারি কী এখন তোমাদের সময় কিভাবে কাটছে ? এই শোন , তোমাদের এখনকার সময়টা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ন। এই মুহ্রূর্তে তোমাদের দরকার নটরডেম, ঢাকা, হলিক্রস এবং লালমাটিয়া কলেজের মতো একটি ভাল কলেজে ভর্তি হওয়া। আর জেলা পর্যায়ে সবচাইতে ভাল কলেজকেই টার্গেট করা। আর ভাষাগত দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিশেষ করে ইংরেজির প্রতি গুরুত্ব দেয়া দরকার। আর সামনে যাদের এইচ,এস,সি ও আলীম, ফাজিল, কামিল পরীক্ষা তাদের অবস্থা তো আল্লাহই ভাল জানেন। এ সংখ্যাটি যখন তাদের কাছে পৌঁছবে তখন তো তাদের নাভিশ্বাস অবস্থা, কারণ তখন টর্ণেডোর মতো পরীক্ষা চলছে, এটি ছুয়ে দেখার সময়টা পর্যন্ত তাদের নেই। তবুও তোমরা সেইসব ভাইবোনদের কাছে এই বার্তা পৌছে দিতে পারো যে এই লেখাটি পড়লে তাদেরও চলমান পরীক্ষাতেও বেশ লাভ হবে। তাই মূলত টিপস আকারে তাদের পরীক্ষার দিনগুলির জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। পরীক্ষার দিনের জন্যে তোমাদের কিছূ মৌলিক টিপস দিচ্ছিঃ

১. পূর্ণ বিশ্রাম ,ভাল খাবার , গোসল করে সুন্দর কাপড় পরে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া যাতে মানসিক আনন্দ থাকে। কারণ মন অস্থির হলে অনেক জানা বিষয় লেখা যায় না।
২. Admit Card, কমপক্ষে তিনটি ভাল কলম, ২টি দুই কালারের মার্কার পেন। যেমন প্রয়োজন তেমনি জ্যামিতি বক্স গুছিয়ে নেয়া দরকার ।
৩. হলে যাওয়ার পূর্বের তিন চার ঘন্টায় মুখস্ত উত্তরগুলোর শুধু Sub point গুলোতে চোখ বুলানো ।
৪. আল্লাহর সাহায্য চেয়ে ২ রাকাত নফল নামাজ পড়ে হলে যাওয়া ।
৫. প্রশ্ন পাওয়ার পূর্বে খাতাটা ভাঁজ করে সুন্দর করে সাজানো।
৬. প্রশ্ন পাওয়ার পর মনোযোগ দিয়ে কমপক্ষে ২ বার প্রশ্নটা আগাগোড়া ভাল করে পড়ে বুঝে নেয়া, হাতে পেয়েই লেখা শুরু না করা। এবং সম্ভাব্য উত্তর দেয়ার জন্য বাছাই করা ।
৭. প্রতিটি উত্তরের জন্যে প্রশ্নের পাশাপাশি সময় ভাগ করে লিখে ফেলা এবং যেগুলোর উত্তর দেয়ার ইচ্ছা তা সহজ থেকে কঠিন এভাবে সিরিয়াল করে সেভাবে উত্তর লেখা। যেমন প্রশ্ন পড়ার জন্য ১০.০০-১০.১০মিঃ

১নং প্রশ্নের উত্তর -১০.১০-১০.৪০ মিঃ

২নং প্রশ্নের উত্তর -১০.৪০-১১.১০ মিঃ ইত্যাদি।

৮. রিভিশনের জন্যে কমপক্ষে ২০মিঃ সময় হাতে রাখা , রিভিশন দেয়া , প্রয়োজনীয় সংশোধনী করা এবং দুই কালারের কলম দিয়ে প্রয়োজনীয় আন্ডারলাইন করা ।
৯. এরপর আল্লাহর কাছে শুধু দোয়া আর দোয়া , কারন আল্লাহ সবই করতে পারেন । আর তার প্রিয় বান্দাদের সাহায্য ও বিজয়ের ওয়াদা তো তিনিই করেছেন।

বন্ধুরা, আত্মউন্নয়নের প্রচন্ড উচ্ছ্বাস নিয়ে আমরা সবাই গেয়ে উঠি আমাদের জাতীয় কবির কিছু বলিষ্ঠ উচ্চারণ;

রইব নাকো বদ্ধ খাঁচায় দেখব এবার ভুবন ঘুরে-

আকাশ -বাতাস চন্দ্র -তারায় সাগর-জলে পাহাড়-চূড়ে ।

আমার সীমার বাধন টুটে-

দশ দিকেতে পড়বো লুটে ;

পাতাল ছেড়ে নামব নিচে ,উঠব আবার আকাশ ফুঁড়ে ;

বিশ্ব-জগৎ দেখব আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে ।


আমাদের স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাস

বক্তা হিসাবে মার্কটোয়েন তখনও বিখ্যাত হননি। স্টেজে দাড়িয়ে লোকদের মনোমুগ্ধ করার মতো যাদু কলাকৌশল তখনও তিনি রপ্ত করতে পারেননি। সেই সময় দূরে এক শহর হতে তিনি বক্তৃতা দেয়ার আমন্ত্রণ পেলেন। ঐ শহরের শ্রোতাদের একটি বদনাম ছিল কেউ ভাল বক্তৃতা দিতে না পারলে তারা পঁচা ডিম ছুড়তো। মার্কটোয়েন তাই লোকদের হালচাল বুঝতে ভয়ে ভয়ে বাজারে গেলেন । সেখানে এক দোকান থেকে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করলেন ‘মশাই, শহরে নাকি আজ এক নামজাদা বক্তা বক্তৃতা রাখবেন ?

দোকানী তার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো -শুনেছি বটে ,তবে বক্তাকে আমি চিনিনা বা তার নাম কি তাও আমি জানি না। মার্ক আশ্চর্য হয়ে বললো- সেকি ! আপনার খদ্দেররাও কি তার নাম জানে না। দোকানী এবার যেন একটু মনোযোগী হয়ে বললো - হ্যাঁ , বোধহয় তারা জানে , আর তাই তো যারা আজ টাউন হলে বক্তৃতা শুনতে যাবে তারা আমার দোকানের সব পঁচা ডিমগুলি কিনে নিয়ে গেছে। মার্ক রীতিমত আতঙ্কিত হয়ে বললো -কেন ? কেন ? দোকানী মুচকি হেসে বললো -কেন আবার! ভালো বক্তৃতা দিতে না পারলে বক্তার চেহারা রাঙিয়ে দেয়ার জন্য।

সেদিন মার্ক তার ভাগে ঠিক কতটি পঁচা ডিম পেয়েছিল জানা যায়নি (এটা কেউ বলে নাকি ?) তবে সেদিনের শিক্ষা নিয়ে সে উত্তরকালে একজন জগৎবিখ্যাত বক্তা হতে পেরেছিলেন ।

এসো তোমাদের সাথে এখন পরিচয় করিয়ে দেই এক রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সাথে। কি ভড়কে গেলে নাকি ? ভাবছো , এটা কি সত্যিই সুন্দরবনের বিশ্ববিখ্যাত ভয়াল দর্শনের সেই বাঘ ! ওরে বাপরে ! কখন না জানি হালুম করে বসে। ওহ!

স্যরি , আমি যাদের নিয়ে লিখছি তারা তো ভড়কে যাওয়ার মতো কেউ নয়। আর গিয়ে, এই রয়েল বেঙ্গল ভয়ালদর্শনীয় কোন জন্তুও নয় বরং অনিন্দ্য সুন্দর এক মানুষ । তার নামটি জানার আগে চলো তার কৈশোরের এক মজার কাহিনী শুনি । “গ্রামের স্কুলের সে প্রথম শ্রেনীর ছাত্র , বয়স কতইবা, পাঁচ বৎসরের এক অবুঝ শিশু। পাঠশালায় যেই ওস্তাদ কোন পড়া দিতেন অমনি সে তা চট করে মুখস্ত করে ফেলতো। আর ওস্তাদকে নিয়ে বলতো, স্যার পড়া শেষ হয়ে গেছে আরো বেশি পড়া দেন। ওস্তাদ তাজ্জব হয়ে বলতেন একি ! তুমি এতো তাড়াতাড়ি মুখস্থ করে ফেলেছো , কিন্তু তোমার সঙ্গীরা তো এখনও পারেনি । বালকটি চট করে উত্তর দিত “ওরা না পারলে আমি কী করব? ওদের জন্য কি আমিও বসে থাকবো।আমি একাই বইটি পড়ে শেষ করে ফেলবো। ওস্তাদ অবাক হলে বলতেন কিন্তু বই শেষ করার জন্য তোমার এত আগ্রহ কেন বাপু ? বালকটি বলতো বাঃ রে! এই বইটি শেষ না হলে আব্বু নতুন বই কিনে দেবে না যে ! আমার যে আরো নতুন বই চাই । নতুন নতুন বই পড়া চাই। ক্লাসে বরাবরই তিনি প্রথম স্থান অধিকার করতেন। বলোতো এবার তার নামটা কি ? মনে হয় চিনতে পারোনি। আচ্ছা ঠিক আছে , এবার তার তরুন বয়সের একটি কাহিনী বলবো। এলাকায় থাকতো মস্তবড় কাবলী জোয়ান। গায়ে অসুরের শক্তি। পাঞ্জায় গ্রামের কোন যুবকই তার সাথে পেরে উঠতো না। মান ইজ্জতের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশেষে গ্রামের সকল ছেলে সেই তরুন নওজোয়ানকে ধরলো। এমন পরাজয়ের কাহিনী শুনে সে তরুণের গায়ের রক্ত টগবগ করে উঠলো। গর্জে উঠলো সে কী ! এত বড় অপমান , চল দেখি কে ব্যাটা পাহলোয়ান। কোথাকার কোন কাবলিওয়ালা। ওকে দেখাবো মজা । শুরু হলো এবার পাঞ্জা লড়াই । মিনিট না যেতই কাবলী জোয়ান চোখে সর্ষে ফুল দেখতে লাগলো। সেই তরুনটি এমন শক্তভাবে ওর আঙ্গুল চেপে ধরলো যে এবার কাবলীর আঙ্গুল ফেটে রক্ত বেরুতে থাকলো ।অসহ্য যন্ত্রণায় বেচারা মরণ চিৎকার দিয়ে বসলো। ওর অসহায় অবস্থা দেখে হাত ছেড়ে দিল বাঙ্গালী তরুন। কাবলী পালাতে পালাতে চিৎকার করে বললো, “বাঙ্গাল মে ভী কাবলী জোয়ান হ্যায় ”। কি এখনও চিনতে পরোনি ? মনে হয় অনেকে চিনে ফেলেছো । আচ্ছা এবার তার যুবক বয়সের একটি ঘটনা বলছি , ১৮৯৫ সালের কথা যুবক ইংরেজিতে এম.এ পরীক্ষা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মাত্র ছ’মাস পরেই পরীক্ষা। আর ঘুরাঘুরি নয় , দাবাখেলা নয়, শুরু করেছেন পড়াশুনার লড়াই । হঠাৎ এক হিন্দু বন্ধু এসে হাজির । আর এসেই খোঁচা দিয়ে বন্ধুটি যুবককে বললো -কী, অংকের ভয়ে বুঝি ইংরেজি নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছ ? তার মানে ? বইয়ের পাতা থেকে মুখ তুলে চাইলো যুবক , চোখে মুখে তার বিস্ময়, কী বলতে চাইছো তুমি ?

আগত বন্ধুটি বললো -না ,বলছিলাম কি ,মুসলিম ছাত্রদের তো একটি দুর্নাম আছে।

কি দুর্নাম ? তারা কোন মগজের কাজে নেই । তারা অনেক ভয় পায়। অংক নাকি তাদের মাথায় ঢোকে না ।

-কী বললে তুমি ? মুসলিম ছাত্ররা অঙ্ক দেখে ভয় পায় ? সহসা যেন বাঘের মতোই গর্জেই উঠলো যুবকটি ।

-নয়তো কী! আগত বন্ধুটি বললো , অঙ্ক দেখে ভয় পাও বলেই তো শুধু মুখস্ত বিদ্যা দিয়ে ইংরেজি পরীক্ষা দিচ্ছ। যদি অঙ্ক নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারতে তবে না হয় বুঝতাম তোমার মাথার জোর ।

-ঠিক আছে, তা-ই হবে। যুবকটি সজোরে টেবিলে মুষ্ঠাঘাত করে বলে উঠলো , আমি আগে অঙ্ক পরীক্ষা দিব। মুসলিম ছেলেরা যে ভয় পায় না তা দেখিয়ে দেব। যেই কথা সেই কাজ। ‘মরদ কা বাত হাতি কা দাঁত। ’ তেজস্বী যুবকটি জেদ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পেশাল পারমিশন নিয়ে মাত্র ছ’মাসের প্রস্তুতিতেই অঙ্কে রেকর্ড সংখ্যক নাম্বার নিয়ে এম এ পাস করলো। সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলো। ইতিমধ্যেই হয়তো সবাই বুঝে গেছ আমরা কাকে নিয়ে আলোচনা করছি । ১৯৬২ সালে তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন সাড়ে ৮৮ বছর বয়সে। এবার নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে জলবৎ তরলঙ পরিস্কার হয়ে গেছে আমরা কার কথা বললাম। হ্যাঁ , তিনি আমাদের সবার পরিচিত সবার গর্বের শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক । তোমাদের কাছে উপরের কৌতুকটি এবং শেরে বাংলার এ কাহিনীটি বলার উদ্দেশ্য কি জানো? কৌতুক থেকে আমরা শিক্ষা নেব, কোন ক্ষেত্রে একজন দুর্বল মানুষও যদিও সে বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াসলি চেষ্টা করে তবে সে ঐ বিষয়ে ঈর্ষণীয় সফলতা অর্জন করতে পারে। আর শেরে বাংলার ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা পাই প্রচন্ড সাহস আর চ্যালেঞ্জ গ্রহন করার মতো মানসিকতা থাকলে মানুষ বড় ধরনের বাধাও টপকাতে পারে । তবে এখানে আরেকটি প্রশ্ন আমাদের মাঝে তৈরি হয়, শেরে বাংলাকে করা হিন্দু বন্ধুটির প্রশ্ন থেকে। সত্যিই কি মুসলিমরা জ্ঞান বিজ্ঞানে আর বুদ্ধিবৃত্তিক দিক দিয়ে অপরাপর জাতির তুলনায় পশ্চাতপদ ছিল ? বিশেষ করে অন্যান্য জাতি যখন শুধু মঙ্গল নয় বরং মহা মহা অভিযান করে মহাবিশ্ব থৈ থৈ করে ফেলছে তখন জ্ঞানবিজ্ঞানে মুসলিমদের করুণ অবস্থা স্বাভাবিকভাবেই নব প্রজন্মের হৃদয়ে প্রশ্নটি তীরের ফলার মতোই বিঁধছে । আর আমিও আমার লেখাতে বেশি বেশি আধুনিক সময়ের মানুষের (যারা বেশিরভাগই অমুসলিম উদাহরণ দেয়ায় ছোট্টমণি পাঠকদের কাছে স্বভাবত:ই ধারণা হয়েছে হয়তো সত্যিই মুসলিমদের ভিতর প্রেরণাদানকারী মনীষীর সংখ্যা খুবই কম। তাই বিবেকের তাগিদেই এমন কিছু উজ্জ্বল মুসলিম জ্যোতিস্কের উদাহরণ তোমাদের সামনে পেশ করতে চাই। তবে জেনে রাখ তাদের অবদান শত শত বই লিখেও শেষ করা যাবেনা। আর আমরা শুধুমাত্র তাদের জ্ঞানার্জনের সাধনা নিয়েই সামান্য কিছু লিখছি । পরবর্তীতে তাদের অবদান নিয়ে ফাঁকে ফাঁকে লেখার ইচ্ছা থাকলো ইনশাআল্লাহ।

ইমাম আবু হানিফার দাদা ছিলেন একজন ইরানী ক্রীতদাস। তার পিতা একজন সামান্য কাপড়ের ব্যবসায়ী থেকে একজন সওদাগরে রুপান্তরিত হয়েছিলেন। তিনি তার পুত্রের মেধাকে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। তাই তাকে ব্যবসায়ে না লাগিয়ে উচ্চশিক্ষা দানে মনোযোগী হন। আবু হানিফা অল্প বয়সেই কুরআনে হাফেজ হন। আরবি ভাষা সাহিত্যে তার ছিল অসামান্য দখল। তিনি জ্ঞানের তুলনায় ধনসম্পদ বা পদবীকে কোনই গুরুত্ব দিতেন না। তাই তার সুনাম শুনে কুফা নগরীর স্বেচ্ছাচারী গভর্নর ইবনে হুরায়রা তাকে কুফার কাজীর মতো গুরুত্বপূর্ন পদ গ্রহনের অনুরোধ করেন। কিন্তু জ্ঞানের পাগল আবু হানিফা তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। কোনভাবেই রাজি করাতে না পেরে অবশেষে সেই বর্বর গভর্নর তাকে বেঁধে বেত মারার আদেশ দেন। কথিত আছে এগার দিন ধরে প্রত্যহ দশ ঘা করে দোররা মেরেও তাকে রাজি করানো যায়নি। তবে দাম্ভিক খলিফা আল মনসুর তাকে ক্ষমা করেনি। আবু হানিফার অপরাধ ছিল তার নির্ভীক স্পষ্টবাদিতা। তিনি মানুষের ওপর খলিফার জুলুম এবং তার অনৈসলামিক কাজের সমালোচনা করতেন। এই অপরাধে আল মনসুর তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন এবং বিষ প্রয়োগে হত্যা করেন। জনসাধারণ তাকে এতই সম্মানের চোখে দেখতো যে , তার মৃত্যুর প্রায় দশ দিন ধরে তার জানাজার নামাজ হয়েছিল এবং প্রত্যেকদিন গড়ে প্রায় পঞ্চাশ হাজার লোক এই নামাজে শামিল হতো। ইমাম আবু হানিফা মুসলিম জুরিসপ্রডেন্স বা ব্যবহার শাস্ত্রের জন্মদাতা। তার শিষ্যদের ভিতর মুহাম্মদ , আবু ইউসুফ ও জাফরের নাম আজ ইতিহাস প্রসিদ্ধ। এই মশহুর শিষ্যত্রয়সহ চল্লিশজন শিষ্য নিয়ে আবু হানিফা একটি কমিটি গঠণ করেন, মুসলিম ব্যবহার শাস্ত্র প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি প্রায় দীর্ঘ ত্রিশ বৎসর সাধনা করে মুসলিম আইন মহাকোষ গঠন করেন। ‘এই সাধনায় বিমুগ্ধ হয়ে মশহুর জার্মান পন্ডিত ভনক্রেমার বলেছেন , এটি ইসলামের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও বুদ্ধির ধারণাতীত ফল ’।

অপরদিকে ফিহরিস্ত নামক বিখ্যাত গ্রন্থসূচি প্রণেতা মোহাম্মদ ইবনে নাদিমের মতে, জাবির ইবনে হাইয়ান দুই হাজারের ও অধিক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। শুধু চিকিৎসা -বিষয়কই তার পাচঁশ গ্রন্থ ছিল। আর বিজ্ঞানের ওপরও তার সমসংখ্যক বই ছিল যার ভিতর একখানি ছিল দুই হাজার পৃষ্ঠা সম্বলিত। চৌদ্দশত আঠারো শতক পর্যন্ত তার লিখিত গ্রন্থগুলি ইউরোপ ও এশিয়ার বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছিল। কিমিয়া বা রসায়নের ওপরই তার একশত গ্রন্থের সন্ধান মেলে। আর তাই তাকে রসায়ন শাস্ত্রের জন্মদাতা বলা হয়। তিনি জ্ঞানের জন্য এতটাই পাগলপারা ছিলেন যে বলিষ্ঠভাবে বলেছেন , “আমার ধনদৌলত , টাকাকড়ি আমার ছেলেরা , ভাইয়েরা ভাগ করে ভোগ করবে। কিন্তু জ্ঞানের দরজায় বারবার আঘাত করে আমি যে শিক্ষা দিয়ে গেলাম , তাই আমার তাজ হিসাবে চিরকাল শোভা পাবে।”

আব্বাসীয় খলিফা আল মামুনের শাসনকালকে মুসলিম জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার স্বর্ণযুগ বলা যেতে পারে। তিনি জ্ঞানবিজ্ঞানের অনুশীলনের জন্য দেশ বিদেশের মশহুর চিকিৎসক , বৈজ্ঞানিক , গাণিতিক , জ্যোতির্বিদ ঐতিহাসিক , সাহিত্যিক , কবি , আইনজীবী , মুহাদ্দেস, তাফসিরকারকদের নিজের দরবারে জড়ো করেন । অতঃপর তাদের নিয়ে দারুল হিকমা তথা বিজ্ঞান নগরী প্রতিষ্ঠিত করে তাদের গবেষণার সর্বাধিক সুযোগ ও পরিবেশ দান করেন । আল মামুন তাদের সমবেত প্রচেষ্টায় হিব্রু ও গ্রীক জ্ঞানভান্ডারকে উজাড় করে আরবিতে অনুবাদ ও রুপায়ণ করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। ঠিক এমন এক প্রেক্ষাপটে ৭৮০ খ্রিষ্টাব্দে মুসা আল খারিজমী জন্মগ্রহণ করেন। যার সিদ্ধান্তগুলি মধ্যযুগের গণিতশাস্ত্রকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। তার পিতা প্রথম জীবনে একজন ডাকাত ছিলেন , তিনি খোরসানের সড়কে রাহাজানি করে বেড়াতন । অতঃপর তার মানসিকতার পরিবর্তন হয় এবং বাগদাদে একমনে জ্ঞান চর্চা করেন। তারই তিনপুত্র মুহাম্মদ ,আহম্মদ ,আর হাসান আরব বিজ্ঞান সাধনার ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। সেই সময়েই তাদের বাড়িতে একটি নিজস্ব গবেষণাগার ছিল এবং তারা সেখানে দিনরাত জ্যোতিষশাস্ত্র নিয়ে গবেষণা চালাতেন। এদের ভিতর মুহাম্মদ তথা মুসা আল খারিজমী সর্বাধিক মেধাবী ছিলেন। তিনি বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহন করেন। তিনি শুধু আরবী নয় বরং হিব্রু , গ্রীক ও সংস্কৃত ভাষারও সুপন্ডিত ছিলেন । তিনি একাধারে ভৌগলিক, জ্যেতির্বিদ , গণিতবিদ ও দার্শনিক ছিলেন। আল মামুনের প্রচেষ্টায় তিনিসহ সত্তরজন ভূতত্ত্ববিদ মিলে ‘সুরত আল আরদ ’ বা পৃথিবীর প্রথম গ্লোব তৈরি করেন। এটাই পরবর্তীতে পৃথিবীর মানচিত্র অংকনে মডেল হিসাবে গৃহীত হয়। ঐতিহাসিক ইবনে খালদুনের মতে খারিজমীই আজকের বীজগনিতের জনক।

সুপ্রিয় বন্ধুরা , আল কুরআনের পরই সবচেয়ে বিশুদ্ধ গ্রন্থটির নাম তোমরা জান কি? হয়তো একগাল হেসে বলবে আরে এটিতো বুখারী শরীফ। হ্যাঁ , এখন তারই রচয়িতা ইমাম বুখারীর কথা বলবো। তার পুরো নাম হলো আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল আল বুখারী। অল্প বয়েসেই তিনি পিতাকে হারান কিন্তু স্নেহময়ী মা ছিলেন একজন অত্যন্ত ধার্মিক ও বিদুষী মহিলা। বরাবরই তিনি পুত্রের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার দিকে নজর রাখতেন। তাই ইমাম বুখারী ছোট্টবেলা থেকেই এমনভাবে গড়ে উঠেছিলেন যে কোন হাদিস একবার মাত্র শুনলেই তার সনদসহ নির্ভুলভাবে সারা জীবন মনে রাখতে পারতেন। প্রায় কুড়ি বছর বয়সে বুখারী মাতা ও কনিষ্ঠ ভ্রাতাসহ মক্কায় হজ্জ পালন করেন এবং পরিশেষে সেখানে কুরআন হাদিসের ব্যাপক জ্ঞান চর্চায় লিপ্ত হন। সেই বয়সে মক্কায় অবস্থানকালেই তিনি রাসুল (সা) রওজার পার্শ্বে বসে বসে অক্লান্ত পরিশ্রম করে জ্যোৎস্না রাতসমুহে সারা রাত জেগে ‘কাদায়া আল সাহাবা ওয়াল তাবেয়িন’ ও ‘আল তরিক আল কবির’ নামক দুটি প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক গ্রন্থ রচনা করেন। ইতিহাসে তার গভীর অনুরাগ ছিল । তিনি বলতেন ‘এমন কোন নাম ইতিহাসে নাই যার সম্বন্ধে কোন বিশেষ কাহিনী আমার জানা নেই ।” অতঃপর তিনি দেশ ভ্রমনে বের হন এবং প্রায় চল্লিশ বছর আজকের মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমুহে ব্যাপকভাবে ভ্রমন করে সেখানকার প্রায় এক হাজারেরও বেশি জ্ঞানীদের সুহবত লাভ করেন এবং তাদের নিকট থেকে ব্যাপক ভাবে হাদিস সংগ্রহ করেন। তিনি সর্বসাকুল্যে প্রায় ছয় লক্ষ হাদিস সংগ্রহ করেন যার ভিতর প্রায় দুই লক্ষ তার কন্ঠস্থ ছিল। এই বিরাট হাদিস সংগ্রহের ভিতর অনেক যাচাই বাছাই করে তিনি মাত্র নয় হাজার হাদিস সহীহ হিসাবে গ্রহন করে আল জামী আল সহীহ নামে তা সংকলন করেন। মাত্র একটি হাদিস সংগ্রহের জন্য তিনি কয়েকশত মাইল সফর করেন। তিনি খুবই আত্মসম্মান বোধসম্পন্ন ছিলেন। একবার বোখারার শাসক তার পুত্রদের শিক্ষা দেয়ার জন্য বুখারীকে তলব করেন কিন্তু বুখারী এ আমন্ত্রণ প্রত্যাখান করে বলেছিলেন “শিক্ষা গ্রহণ করতে হলে শাহজাদাদেরকেই আমার পর্ণ কুটিরে আসতে হবে।

এবার তোমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেব সূর্যোদয়ের দেশ জাপানের এক মজার বন্ধুর সাথে। তার নাম হিরোতাদা ওতোতা। তোমরা শুনলে হয়তো আতকে উঠবে। আসলে তিনি জন্মগতভাবেই জন্মেছিলেন সম্পূর্ণ হাত পা ছাড়াই। আল্লাহর এই পৃথিবীতে কোন মানুষই স্বয়ংম্পূর্ণ নয়। তাই কারো দুটি হাত পা থাকলেই যেমন গর্ব করা উচিত নয় , ঠিক তেমনি যাদের এক্ষেত্রে অপূর্ণতা আছে, তাদেরও ভেঙ্গে পড়া উচিত নয়। তাই ২৩ বৎসর বয়োসি ওতোতা মুখ গোমরা করে বসে থাকেননি, সম্পূর্ণ হাত-পা ছাড়াই তিনি তার যোগ্যতা প্রমান করেছেন। এই বিকলাঙ্গ জাপানী তরুণের লেখা বই সম্প্রতি জাপানে তো বটেই সারা বিশ্বেই আলোড়ন তুলেছে। ছবিতে তার এক বই ‘নো ওয়ান্স পারফেক্ট ’ এর ইংরেজি অনুবাদ নিয়ে তিনি এক তরুণীর সাথে কথা বলেছেন। তিনি এই বইয়ে জাপানের সামর্থ্যবান লোক ও বিকলাঙ্গ লোকদের পার্থক্য ঘুচিয়ে দেয়ার আহবান করেছেন । অর্থাৎ ওতোতা আজ জীবন যুদ্ধে এক বিজয়ী বীর। আমাদের অনেক বন্ধুই আছে যারা এরকম প্রতিবন্ধী হওয়ার পরও আজ আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। আমার প্রিয়বন্ধু দশম শ্রেনীর ছাত্র জন্মান্ধ আজাহার এর কথা আজ মনে পড়ে । সে অন্ধ হয়েও দাবা খেলায় এক সময়কার গাজীপুর জেলা চ্যাম্পিয়নকে হারিয়ে দিয়েছিল । আমার এক খালাতো ভাই সাহস করে তার সাথে খেলতে গিয়ে গো-হারা হলো । প্রথম সাক্ষাতের সময় সে আমাকে একটি শুভ্র কাগজে অন্ধদের ব্রেইলী পদ্ধতিতে একটি লেখা লিখে দিয়েছিল । আজও যা আমার নিত্যসঙ্গী , তাতে লেখা আছে ‘আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন , আমাদের দেখতে আসার জন্যে ধন্যবাদ।’ আরেক বন্ধু লিটন অস্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছে । জন্মগতভাবে সে বোবা , অথচ মন তার সর্বদা কথা বলার জন্য আঁকুপাঁকু করে । প্রথম সাক্ষাতেই সে তার একটি কাগজে লিখলো ,আমার নাম লিটন , আমাকে কি তোমার ভাল লেগেছে? তাকে ভালো না বেসে কেউ থাকতে পারবে না। সে একজন মৃৎশিল্পের দক্ষ কারিগর , তার দক্ষ হাতের ছোঁয়ায় মাটির ক্যানভাসে ফুটে ওঠে বর্ণাঢ্য সব প্রাকৃতিক দৃশ্য । আর হৃদয়েও তার সেই বর্ণাঢ্যতার বাগান , আমাদের হাত ধরে জোর করে তার নিজহাতে মোছা সবচেয়ে বড় চেয়ারগুলোতে বসিয়ে দিল। বাজার থেকে চা আনালো , কোন ভাবেই না খেয়ে যেতে দেবে না। তার সেই আকুতিভরা ছলছল চোখের আবেদন ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে আসে এটা কার সাধ্য ! আরেক ভাই কাজল , সত্যিই চোখ তার কাজল কালো কিন্তু একটি চোখে আলো নেই , একটি পা প্যারালাইজড । কম্পিউটারে রয়েছে তার প্রচন্ড দক্ষতা ।জীবন সংগ্রামে সাহসিকতার সাথে এগিয়ে চলতে সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ । শুধু তাই নয় ,সারাদেশের মানসিক প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ডব্লুসিডি -এর সে একজন কেন্দ্রীয় নেতা । অনেক যোগ্যতা থাকার পরও হয়তো তারা আমাদের দেশের সামগ্রিক অব্যবস্থার কারণে দ্রুত এগুতে পারছে না। কিন্তু উন্নত দেশগুলিতে কি অবস্থা? চলো আমরা একটু খোঁজ নেই মাইকেল কোলম্যান , আইবিএম কোম্পানির গ্লোবাল অপারেশনস বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট। ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন , বোমা বিকল করতে গিয়ে দুটো হাতেরই কব্জি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছেন তিনি । কিন্তু সাহস হারাননি । যুদ্ধ শেষে আজ জীবনযুদ্ধে তিনি এখন বিশ্বের এক গুরুত্বপূর্ণ সিপাহসালার । ক্রিস হারম্যান , আমেরিকার ক্রেস্টর ব্যাংকের কাস্টমার সার্ভিস রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসাবে কাজ করছেন। তিনি একজন কোয়ড্রিপ্লেজিক অর্র্থাৎ দুটো হাত এবং দুটো পায়ের কোনকিছুই নাড়াতে পারেন না । চাকরিতে জয়েন করার সময় আবেদনপত্র স্বাক্ষরের জন্য তার মুখে কলম গুজে দিতে হয়েছিল রিক্র’টিং বোর্ডের চেয়ারম্যাকে। ভয়েস অ্যাক্টিভেটেড টেকনোলজি বা কন্ঠস্বর চালিত প্রযুক্তির সাহায্যে হারম্যান শুধু তার কম্পিউটারকে বলে দেন কি কি করতে হবে। মুহূর্তের মধ্যে সেসব আদেশ তামিল হয়ে ফুঠে ওঠে কম্পিউটারের মনিটরে । শুধুমাত্র আমেরিকাতে এসব বিশেষ নাগরিকের সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি । এদের ভিতর যারা কর্মজীবী তাদের ওপর প্রায় ত্রিশ বছর লাগাতার সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে , কিছু কিছু কাজে এরা সাধারণ মানুষদের চাইতে দক্ষতায় এগিয়ে আছে। তাদের গড়পরতা দক্ষতা , বিশ্বস্ততা আর নিয়মনিষ্ঠ উপস্থিতি অনেক ক্ষেত্রেই তাদের এগিয়ে নিয়ে যায় মালিক পক্ষের খুবই কাছাকাছি । বর্তমান শতাব্দীর বেস্টসেলার বুক ‘এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম ’ গ্রন্থের লেখক স্টিফেন হকিং। বর্তমান বিশ্বের সবচাইতে প্রতিভাধর এই বিজ্ঞানী মটর নিউরন ডিজিজে আক্রান্ত হয়েও ভয়েস এক্টিভেটেড টেকনোলজি ব্যবহার করে হুইলচেয়ারে বসে শুধু কথাবার্তা, এমনকি চোখের পাতা নড়াচড়ার মাধ্যমে একের পর এক তার গবেষণার কাজ শেষ করছেন। হায়! আমাদের দেশেও যদি সেই পরিবেশ ও সুযোগ সৃষ্টি করা যেত, যাতে করে এই সকল প্রতিবন্ধীদের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসতো জিনিয়াসরা । আমরা প্রাণ খুলে সেই সকল বন্ধুদের জন্য দোয়া করবো। চলো এবার শুরু করি আমাদের আলোচনার ধারাবাহিকতা , কেমন?

আল-কিন্দী মুসলিম জগতের ‘আল ফাইলাসুফ ’ বা শ্রেষ্ঠ দার্শনিক হিসাবে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন ; পাশাপাশি মৌলিক বিজ্ঞান সাধনায়ও তার নাম আরব জগতে সবচাইতে বিখ্যাত। তার পুরো নাম ছিল আবু ইউসুফ ইয়াকুব ইবনে ইসহাক আল কিন্দী । তিনি ৮১৩ সালে কুফায় জন্মগ্রহন করেন । আল কিন্দী একাধারে কুরআন , হাদিস , ফিকাহ, ইতিহাস , দর্শন, ভাষাতত্ত্ব , রাজনীতি . চিকিৎসাবিদ্যা , পদার্থবিজ্ঞান ,অংকশাস্ত্র , জ্যোতির্বিদ্যায় বিশারদ ছিলেন। আর সঙ্গীতেও তার আকর্ষণ কম ছিলনা। এরকম বারোটি স্বতন্ত্র বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়ার পরও তিনি আরবী , গ্রীক, হিব্রু , ইরানী, সিরীয়াক এমনকি সংস্কৃতসহ ছয়টি ভাষায় অসাধারণ বুৎপত্তি অর্জন করেন। ষোল শতক পর্যন্ত জগতে যে সব মহামনীষী জন্মগ্রহন করেছেন তাদের মধ্যে বার জনের ভিতর একজন হিসাবে আল কিন্দীকে গণ্য করা হয় । তিনি দর্শন ,ভাষাতত্ত্ব, রাজনীতি , অংকশাস্ত্র , জ্যোতির্বিদ্যায় এবং সংগীতের ওপর প্রায় দুইশত পয়ষট্টিখানা গ্রন্থ রচনা করেন। আজও ইউরোপে আল-কিন্দীকে দর্শনের প্রথম পরিচায়ক ও ভাষ্যকার হিসাবে শ্রদ্ধা করা হয়।

তিব্বিয়া বা চিকিৎসাশাস্ত্রে মুসলিমদের ভিতর সর্বাপেক্ষা প্রথম উল্লেখযোগ্য সাধক ছিলেন আলী ইবনে সহল রব্বান আল তাবারী । তিনি সম্ভবত আট শতকের শেষের দিকে তাবারীস্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আরবি ছাড়াও সিরিয়াক ,ফারসি , হিব্রু ভাষায় সুপন্ডিত ছিলেন । আলী তাবারী চিকিৎসা বিষয়ে কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। তার মধ্যে ‘ফেরদৌস আল হিকমাহ ফি আল -তিব্বত বা ঔষধের স্বর্গ নামক গ্রন্থটিই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। এটিকে আরবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রথম বিশ্বকোষ বলা যেতে পারে ।

বর্তমান ইরানের রাজধানী তেহরানের অন্তর্গত রায নগরে ৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে আবু বকর মোহাম্মদ ইবনে জাকারিয়া জন্মগ্রহণ করেন। ১২২০ সালে মোঙ্গলদের হাতে ধ্বংসের আগে এ শহরটি মুসলিম জাহানে জ্ঞানবিজ্ঞানের জন্য বিখ্যাত ছিল। সেই জন্য আবু বকর জন্মভূমির নামানুসারে নিজের নিসব আল রাযী গ্রহণ করেন।তিনি আলকেমী নিয়ে গবেষনা করতেন কিন্তু তার সবচেয়ে বড় অবদান চিকিৎসাশাস্ত্রে । তিনি নানা বিষয়ে কমপক্ষে দুইশত গ্রন্থ রচনা করেছিলেন তার ভিতর চিকিৎসাশাস্ত্রেই প্রায় একশত । তার সবচেযে বড় কীর্র্তি হচ্ছে বসন্ত ও হাম রোগ সম্বন্ধে ‘আল জুদারী ওয়াল হাসাবাহ’ নামক পুস্তকটি । এই গ্রন্থটি ল্যাটিন ও ইউরোপীয় সকল ভাষাতেই তরজমা করা হয় । শুধু ইংরেজি ভাষাতেই ১৪৯৮ সাল থেকে ১৮৬৬ সাল পর্যন্ত এটি চল্লিশবার মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয় । তার আরেকটি শ্রেষ্ঠ অবদান হচ্ছে ‘আল-হাবী ’ সর্বপ্রকার রোগ সম্বন্ধে বিশদ আলোচনাসহ চিকিৎসা প্রণালী ও ঔষধের ব্যবস্থা সম্বলিত একখানি আভিধানিক গ্রন্থ। এটি কুড়ি খন্ডে সমাপ্ত হয়। বর্তমানে এর দশটি খন্ডের অস্তিত্ব আছে । আল-হাবী ইউরোপীয় চিন্তারাজ্যে অসামান্য প্রভাব বিস্তার করেন । ১৪৮৬ সালের পর হতে ইউরোপের প্রত্যেক দেশেই এই বইটি ক্রমাগত দ্রুত ও প্রকাশিত হতে থাকে। এর নবম খন্ডটি ইউরোপের প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ পুস্তক হিসাবে ষোলশতক পর্যন্ত নির্দিষ্ট ছিল । আল রাযীর জ্ঞানার্জনের কেমন আগ্রহ ছিল এটি তার নিম্নোক্ত বক্তব্য থেকেই বুঝা যায় “যারা আমার সাহচর্যে এসেছেন , কিংবা আমার খোঁজ রাখেন, তারাই জানেন জ্ঞান আহরণের আমার কী আকুল আগ্রহ , কী তীব্র নেশা । কিশোরকাল হতেই আমার সকল উদ্যম , এই একটি মাত্র নেশায় ব্যয়িত হয়েছে। যখনই কোন নতুন বই হাতের কাছে পেয়েছি , কিংবা কোন জ্ঞানীর সন্ধান পেয়েছি তখনই অন্য সকল কাজ ফেলে , বহু আর্থিক ত্যাগ স্বীকার করেও নিবিষ্ট মনে বইখানা পাঠ করেছি কিংবা সে জ্ঞানীর নিকট যথাসাধ্য শিক্ষা গ্রহণ করেছি । জ্ঞান সাধনায় আমার এমন অদম্য উৎসাহ ও অসাধারণ সহিষ্ণুতার ফলেই মাত্র এক বৎসরে আমি কুড়ি হাজার পৃষ্ঠার মৌলিক রচনা লিখেছি (প্রতিদিন প্রায় ষাট পৃষ্ঠা করে ) এবং তাও তাবিজ লেখার মতোই ঝরঝরে অক্ষরে । প্রায় পনের বৎসর আমি ব্যয় করেছি আমার বিরাট চিকিৎসাবিধান লিখতে । দিনরাত্রে এমন কঠোর পরিশ্রম করেছি যে , শেষে আমি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলি । কিন্তু এখনও আমার জ্ঞান পিপাসা মেটেনি। আজও আমি অন্যকে দিয়ে বই পড়িয়ে শুনি কিংবা আমার রচনা লেখাই ।” আবু জাফর মুহাম্মদ ইসনে জরীর আল তাবারী ছিলেন জাতিতে ইরানী। তিনি ইরানের সবচেয়ে গিরিসংকুল স্থান তাবারিস্থানে ৮৩৮ সালে জন্মগ্রহন করেন ।তিনি আরবী ভাষা ও সাহিত্য, ইতিহাস , দর্শন , তর্কশাস্ত্র ও ভূতত্ত্বে গভীর জ্ঞানার্জন করেন। এ সময় তার সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ ছিলো কুরআনের তাফসির ও হাদিসে । তিনি জ্ঞানীদের সংস্পর্শে গিয়ে সরাসরি জ্ঞানার্জনের জন্য আরব ছাড়াও মিসর ,সিরিয়া ইরাক ইরান প্রভৃতি দেশ কয়েক বছর সফর করেন । এসময় তাকে বহুদিন অর্ধাহারে এমনকি অনাহারেও কাটাতে হয়েছে। একবার অবস্থা এত শোচনীয় হয়ে ওঠে যে , উপর্যুপরি কয়েকদিন অনাহারে কাটিয়ে প্রাণ বাঁচানোর জন্য নিজের জামার দুটি হাতারই বিনিময়ে তাকে রুটি সংগ্রহ করতে হয়েছিল। আল তাবারী ইসলামের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন একজন শ্রেষ্ঠ তাফসীরে কুরআন এবং একজন শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক হিসেবে । তার তাফসিরের নাম ‘জামি আল-বায়ান ফি তাফসীর আর-কুরআন । এটি বর্তমানে সুবৃহৎ ত্রিশটি খন্ডে প্রকাশিত। তাবারীর বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থের নাম ‘আখবার আল রাসূল ওয়াল মুলুক ’অর্থাৎ পয়গাম্বর ও রাজাদের ইতিহাস । বর্তমানে ইতিহাস গ্রন্থখানি মাত্র পনের খন্ডে প্রকাশিত হয়। কিন্তু পন্ডিতদের বিশ্বাস, আসল ইতিহাস গ্রন্থখানি এর কমপক্ষে দশগুন ছিল। কথিত আছে যে , একশত পঞ্চাশখন্ডে সমাপ্ত এই বিশাল ইতিহাস যখন তার ছাত্ররা পড়তে অস্বীকার করে , তখন তিনি আক্ষেপ করে অধুনা প্রকাশিত পনেরো খন্ডের সার সংকলনটি করেছিলেন। এই বিরাট গ্রন্থে সৃষ্টির আদিকাল থেকে ৯১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্ব ইতিহাসের বর্ণনা আছে। জ্ঞানানুশীলনে তার জীবনকে তিনি কিভাবে উৎসর্গ করেছিলেন তার পরিচয় মেলে যখন আমরা জানতে পারি যে , তিনি ক্রমাগত চল্লিশ বছর যাবত দৈনিক চল্লিশ পৃষ্ঠা করে মৌলিক লেখা রচনা করতেন (অর্থাৎ এ সময়ে তিনি রচনা করেন প্রায় পাঁচ লক্ষ চুরাশি হাজার পৃষ্ঠা )

৮৫৮ সালে হাররান অঞ্চলে আল-বাত্তানী জন্মগ্রহণ করেন । বাল্যকালে তিনি বাগদাদের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শিক্ষা লাভ করেন। মাত্র উনিশ বৎসর বয়সেই আল-বাত্তানী বাগদাদ ত্যাগ করে ফোরাত নদীর পূর্ব উপকূলস্থ আল রাক্কা নামক স্থানে গমন এবং সেখানে আমৃত্যু তিনি গবেষণায় লিপ্ত থাকেন । এখানে তার নিজস্ব গবেষণাগার ও গবেষণার উপযোগী প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ছিল। তিনি গণিতশাস্ত্র এবং জ্যোতির্বিদ্যায় একজন মৌলিক গবেষক ছিলেন। এদুটি বিষয়ে তিনি অনেক মৌলিক গ্রন্থ রচনা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তার অধিকাংশই আজ কালের করালগ্রাসে হারিয়ে গেছে।

দশ শতকের মাঝামাঝি একজন শান্ত প্রকৃতির ক্ষুদ্রাকৃতি তুর্কী পোশাক -পরা বৃদ্ধলোক আলেপ্পোর হামদানী আমীর সায়েফউদ্দৌলার দরবারে উপস্থিত হন। তাকে আট -দশটি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে দেখে এবং ইসলামী ধর্মতত্ত্বে , দর্শন , বিজ্ঞান , চিকিৎসা , এমনকি কবিতা ও গানে তার অগাধ পান্ডিত্য ও পারদর্শিতা দেখে গুণগ্রাহী আমীর তাকে সম্মানের সাথে আপন দরবারে স্থান দেন। এর কিছুদিনের ভিতরই তাকে সভাপতির মর্যাদা দান করেন। এই জ্ঞানী লোকটিই প্রাচ্যের মুয়াল্লিম-সানী তথা দ্বিতীয় শিক্ষাগুরু আবু নাসর মুহাম্মাদ আল ফারাবী। তিনি আকৃতিতে ক্ষুদ্র , চক্ষুতারকা আরো ক্ষুদ্র এবং সামান্য কয়েক গাছি শ্মশ্রুশোভিত পুরুষ ছিলেন। তিনি বিবাহ করেছিলেন কিনা বা তার পুত্র-কন্যা ছিল কিনা , কিছুই জানা যায় না। কিন্তু অদম্য জ্ঞানস্পৃহা তাকে জন্মভূমি ত্যাগ করতে প্রলুব্ধ করে। কাজীর মতো সম্মানিত পদে ইস্তফা দিয়ে পঁচিশ বৎসর বয়সে তৎকালীন জ্ঞান বিজ্ঞানের কেন্দ্রভূমি বাগদাদে তিনি গমন করেন । প্রায় সত্তরটি বিরাট নোটবুকে দর্শনশাস্ত্রের সারাংশ তিনি লিপিবদ্ধ করেছিলেন । ফারাবী এরিস্টিটলের আত্মা সম্বন্ধীয় গ্রন্থটি একশরও বেশি বার এবং পদার্থবিদ্যা বিষয়টি চল্লিশবার পাঠ করেছিলেন । এখানে উল্লেখযোগ্য যে , প্রাচ্যের সুধী সমাজে এরিস্টটল মুয়াল্লিম আউয়াল বা আদিগুরু ও ফারাবী মুয়াল্লিম সানী বা দ্বিতীয় গুরু হিসাবে পরিচিত। মুসলিম দার্শনিকদের পিরামিডে তার নাম সর্বোচ্চ । তিনিই ইসলামের প্রথম বিশ্বকোষ রচয়িতা ও মুসলিম তর্কশাস্ত্রের জন্মদাতা ।

ঐতিহাসিক ও ভূতাত্ত্বিক হাসান আলি আল মাসুদী বাগদাদে সম্ভবত নয় শতকের শেষের দিকে জন্মগ্রহন করেন। আল-মাসুদী বাল্যেই উচ্চ শিক্ষা প্রাপ্ত হন। ইতিহাস , দর্শন , ন্যায়শাস্ত্র , ভূগোল, জ্যোতিষশাস্ত্র ও প্রানীতত্ত্বে তার অসাধারণ বুৎপত্তি জন্মে , সাহিত্য-সংগীত ও কবিতা রচনাতেও তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন । তিনি সমসাময়িক আলেমদের মতোই বিশ্বাস করতেন “আর -রিহলাহ ফি-তালাব আল ইলম ” অর্থাৎ সফর করলে জ্ঞানবৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবী । তাই পথের মোহে যৌবনেই তিনি ভ্রমণে বহির্গত হন ও প্রায় অর্ধ শতাব্দীব্যাপী তৎকালীন দুনিয়া চষে বেড়ান । আল মাসুদী তার দীর্ঘ সফরের অভিজ্ঞতা থেকে শেষ জীবনে সুবৃহৎ গ্রন্থ ‘মারুফ আল-যাহাব ওয় মায়াদিন আল জওহর ’বা ‘সোনালী ময়দান হীরার খনি ।’ প্রণয়ন করেন ।এই বিরাট ইতিহাস ভূগোলের বিশ্বকোষ খানি ত্রিশটি খন্ডে সমাপ্ত। এই জন্য তাকে মুসলিম ঐতিহাসিকদের ভিতর হেরোডোটাস বলা হয় । উক্ত গ্রন্থের উপক্রমনিকায় মাসুদী নিজেই বলেছেন ‘ইতিহাস রচনার পূর্বে তিনি পঞ্চাশজন মশহুর ঐতিহাসিকের গ্রন্থ পাঠ করে তথ্য সংগ্রহ করেছেন । এটির অসম্পূর্ণ অংশ ত্রিশ খন্ডে ভিয়েনার গ্রন্থাগারে রক্ষিত আছে। আল্লাহপাক মুসলমানদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, “তোমরাই সর্বোত্তম জাতি। মানবতার কল্যাণের জন্যে তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে” অথচ আজ আমরা পৃথিবীর যে দিকেই তাকাই না কেন , কী দেখতে পাই ? দেখতে পাই সারা পৃথিবীতে মুসলমানেরা আজকে চরম পশ্চাতপদতা , বঞ্চনা আর সর্বগ্রাসী নির্যাতনের শিকার। তাহলে কি আল্লাহর ঘোষণা কখনও মিথ্যা হতে পারে ? না বরং আসল সত্য হলো , যাদের উদ্দেশ্যে এই ঘোষণা দিয়েছেন আমরা সেই সত্যিকার মুসলমান হতে পারিনি।

Comments

Popular posts from this blog

বিষয় ভিত্তিক আয়াত-হাদিসঃ মুমিনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য - দাওয়াত - সংগঠন - প্রশিক্ষণ - ইসলামী শিক্ষা - ইসলামী বিপ্লব

বিষয় ভিত্তিক আয়াত-হাদিসঃ মুমিনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য - দাওয়াত - সংগঠন - প্রশিক্ষণ - ইসলামী শিক্ষা - ইসলামী বিপ্লব মুমিনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কুরআন انى وجهت وجهى للذي فطر السموات والارض حنيفا وما انا من المشركين ـ (انعام ـ 79) উচ্চারণ: : ইন্নী ওয়াজজাহাতু ওয়াজহিইয়া লিল্লাযী ফাতরাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানীফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকীন। (১) আমি তো একমুখী হয়ে নিজের লক্ষ্য সেই মহান সত্তার দিকে কেন্দ্রীভূত করছি যিনি যমীন ও আসমানসমূহকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি কনিকালেও মুশরিকদের মধ্যে শামিল নই। (সূরা আনয়াম: ৭৯) قل ان صلاتى ونسكى ومحياي ومماتى لله رب العلمين ـ (انعام :162) উচ্চারণ: : কুল ইন্না ছালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়াইয়া ওযা মামাতী লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন। (২) বল, আমার নামায, আমার যাবতীয় ইবাদত, আমরা জীবন ও মৃত্যু সবকিছুই সারা জাহানের রব আল্লাহরই জন্য। (সূরা আনয়াম: ১৬২) وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون ـ (ذارية ـ 56) উচ্চারণ: : ওয়া মা খলাকতুল জিন্না ওয়াল ইনসা ইল্লা লিইয়া’বুদূন। (৩) আমি জ্বিন ও মানুষকে অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি, কেবল এজন্য সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার বন্

আল-আইয়্যামে ড. ত্বহা হুসায়নের শৈশব জীবন চিত্র

আল-আইয়্যামে ড. ত্বহা হুসায়নের শৈশব জীবন   চিত্র আরবী সাহিত্য জগতে উনিশ শতকের শেষার্ধে মিশরে ডঃ ত্বহা হুসায়নের আবির্ভাব ঘটে ; সে সময় অনুকরণের উষ্ণ হাওয়া বইছিল। নানা প্রকার কুসংস্কারে নিপতিত , বৈদেশিক শাসনের যাতাকলে নিষ্পেষিত , ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য ও বাক স্বাধীনতা , রাজনৈতিক অধিকার , অর্থনৈতিক মূল্যবোধ , মানবিক অধিকার ও সামাজিক মর্যাদা থেকে জাতি বঞ্চিত অবহেলিত , ঠিক তখন এ লাঞ্ছিত , উৎপীড়িত দিশেহারা জাতিকে পথ নির্দেশনার জন্যই ছিল তাঁর সাহিত্যকর্ম । তাঁর ক্ষুরধার লিখনীতে তন্দ্রাচ্ছন্ন জাতির সুপ্তপ্রাণে বিপ্লবের জোয়ার এসেছিল। তিনি ছিলেন একাধারে শিক্ষাবিদ , সংস্কারক , গবেষক , ঐতিহাসিক , বিজ্ঞানধর্মী সমালোচক , প্রভাবশালী বাগ্নী , সর্বোপরি আধুনিক মিশর ও আধুনিক আরবী সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা।১ The New Encyclopaedia Britannica তে বলা হয়েছে “Taha Hussain, was an outstanding Figure of the Modernist movement in Egyptian literature.” 2  ডঃ ত্বহা হুসায়ন রচিত অসংখ্য গ্রন্থাবলীর মধ্যে আল- আইয়্যাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। এটি তিন খন্ডে সমাপ্ত। যার মধ্যে তিনি নিজ জীবনীর বিভিন্ন দিক তু

মনে রাখার সহজ কৌশলে Exclusive টেকনিকে আর্ন্তজাতিক বিষয়াবলী সাধারন জ্ঞান। আশা করি মনোযোগ দিয়ে একবার পড়লেই মনে থাকবে।

মনে রাখার সহজ কৌশলে Exclusive টেকনিকে আর্ন্তজাতিক বিষয়াবলী সাধারন জ্ঞান। আশা করি মনোযোগ দিয়ে একবার পড়লেই মনে থাকবে। SAARC এর সদস্যঃ Exclusive টেকনিকঃ NIPA MBBS পড়তে আগ্রহী। NIPA = নেপাল, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্থান। MBBS= মালদীপ, বাংলাদেশ, ভুটান, শ্রীলংকা। ECO – ভুক্ত শর্টকাট মনে রাখার নিয়মঃ Exclusive টেকনিকঃ আইতু + ৭ স্তান। =আজারবাইজান, ইরান, তুরস্ক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, কাজাখস্তান, কিনঘিজিস্তান, তুর্কিমেনিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান। D-8 ভুক্ত শর্টকাট মনে রাখার নিয়মঃ Exclusive টেকনিকঃ বাপ মা নাই তুমিই সব। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালয়শিয়া, নাইজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, মিসর, ইরান। ASEAN এর সদস্যঃ Exclusive টেকনিকঃ MTV তে FILM দেখলে BCS হবে না। Mayanmar, Thailand, Vietnam, Phillipines, Indonesia, Laos, Malaysia, Brunei, Cambodia, Singapore. Super Seven এর সদস্যঃ Exclusive টেকনিকঃ থামাই+ সিতাদহ থাইল্যান্ড, মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিংগাপুর, তাইওয়ান, দঃ কোরিয়া, হংকং। থাইল্যান্ড, মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া + FOUR TIGERS. Scandinavian States এর সদস্যঃ Exclusive টেকন