Skip to main content

৮ই ফেব্রুয়ারি,নির্মমতার প্রতিচ্ছবি

৮ই ফেব্রুয়ারি,নির্মমতার প্রতিচ্ছবি
মু.রাজিফুল হাসান বাপ্পি

সবুজ-শ্যামল, পাহাড় ঘেরা আর শতজাত পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত প্রকৃতির অনিন্দ্য সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আবহমান বাংলার সকল অতীত ঐতিহ্যকে ধারণ করেই পরিচালিত হয়ে আসছে এই প্রতিষ্ঠানটি।
শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক চর্চার পাশাপাশি বিভিন্ন মতাদর্শের রাজনীতি চর্চাও এখানে স্থান পেয়েছে বেশ গুরুত্বের সাথে।
্বাধীনতার পর থেকেই মুক্ত চর্চার এই বিদ্যাপীঠে নতুন আঙ্গিকে পদযাত্রা শুরু করে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন। আদর্শিক মানদন্ডে উৎরাতে না পেরে স্তিমিত হয়েছে অনেকেই। তবে ক্ষমতার মোহে আদর্শকে বিলীন করে ব্যাক্তিগত স্বার্থোদ্ধার আর শোষণ-নিপীড়নের প্রয়াসে আজো তৎপর অনেক সংগঠন।
এদিকে ইসলামী ছাত্রশিবির নিজেদেরকে আদর্শের মানদন্ডে যোগ্য প্রমাণ করে এই ক্যাম্পাসের প্রতিটি পত্রপল্লবের সবুজের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। সেই আশির দশক হতে ইসলামী ছাত্রশিবির তাদের বিন¤্র আচরণ, মোয়ামেলাত আর ইসলামী জীবনাদর্শকে ব্যক্তি জীবনে ধারনের মাধ্যমে ইসলামের সুমহান বাণী প্রচার করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে এবং স্থান করে নিয়েছে প্রত্যেকের হৃদয়ের মণিকোঠায়।
আদর্শ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সত্যের এই বাণীবাহকদের পোহাতে হয়েছে অনেক কষ্ট, এবং সম্মুখীন হতে হয়েছে অনেক পরীক্ষার। ইসলাম বিদ্বেষী অশুভ শক্তির চক্রান্তের শিকার হয়ে হারাতে হয়েছে নয়জন মুজাহিদকে। পঙ্গুত্ববরণ আর অসমাপ্ত শিক্ষাজীবনের স্বাদ গ্রহণ করতে হয়েছে আরো অসংখ্য ভাইকে। তবে শত বাধা-বিপত্তি স্বর্তেও ক্ষণিকের জন্যও বন্ধ হয়নি কুরআন প্রতিষ্ঠার এই কাজ। সর্বশেষ বিগত ০৮/০২/২০১২ ইং তারিখেও সত্যের সেনানীরা বাতিলের বিরুদ্ধে জীবন দিয়ে সমুন্নত রেখেছে সুমহান আদর্শের এই কাজ।
কি এমন হয়েছিল সেদিন? যে কারণে দু-দুটি তাজা প্রাণ ছিনিয়ে নিল হায়েনার দল।

০৮/০২/২০১২ রোজ বৃহস্পতিবার, অন্যান্য দিনের ন্যায় শাটল ট্রেনে করে আসা শিক্ষার্থীদের ভীড়ে পরিপূর্ণ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়। বন্ধু-বান্ধবদের গল্পগুজব আর আড্ডায় মুখরিত ঝুপড়িসমূহ। সময়মত ক্লাস শুরু হয়েছে প্রতিটি অনুষদেই।

সকাল ১০টা
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী ছাত্রশিবির কর্মী ফিরোজ হাসনাত ও আল-আমিনের সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয় তাদেরই সহপাঠী ছাত্রলীগ কর্মী শাহিন। কারণ হিসেবে জানা যায় তাদেরই অন্যএক সহপাঠী নাজমুলকে নিয়মিত ক্লাসে ৎবংঢ়ড়হংব করার অভিযোগ এনে মারধর করা এবং ক্লাাসে আসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল ছাত্রলীগ কর্মী শাহীন।
জ্ঞান অর্জনের এই বিদ্যাপীঠে এসে আমি যতটুকু জেনেছি নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকা, শিক্ষকদের সাথে পড়াশুনা নিয়ে আলোচনা করা, ক্লাসের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষকদের নিকট জেনে নেওয়াই একজন ভাল ছাত্রের বৈশিষ্ট্য।
অথচ একি দেখছি ! ছাত্রলীগ কর্মীর মানদন্ডে নাকি এটা অপরাধ ?
বাকবিতন্ডার কথা জেনে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন শিবির কলা অনুষদ শাখার সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, চেষ্টা করেন সমঝোতার।
কিন্তু না! কিসের সম্েঝাতা? জ্ঞানার্জনের অদম্য স্পৃহা যাদের দৃষ্টিতে অপরাধ, সমঝোতা কি তাদের সমাধানের পথ হতে পারে?
ক্ষণিকের মধ্যেই প্রায় ৪০ জন স্বশস্ত্র ছাত্রলীগ নেতাকর্মী একত্রিত হয় কলা অনুষদের ঘটনাস্থলে । কথাবার্তার ফাঁকেই ছুরিকাঘাত করে আহত করে শিবির কর্মী আবদুল্লাহ নাঈমকে। ধাওয়া করে নিয়ে যায় শিবির কলা অনুষদ শাখার সভাপতি আবুল কালাম আজাদকে এবং ধারলো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে তার হতে।
ূূআহত ভাইদের সংবাদ শুনে ঘটনাস্থলের দিকে ছুটে যায় সহযোগীরা। ততক্ষণে রক্তপিপাসুর দল চলে যেতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় গোল চত্বরের দিকে। সেখানে একত্রিত হতে থাকে বহিরাগতসহ অস্ত্রধারী ছাত্রলীগ ক্যাডার বাহিনী। প্রশাসনের সবুজ সংকেত পেলেই দখলের উদ্দেশ্যে আক্রমণ করবে শাহ আমানত হল।
এই খবর জানতে পেরে লড়াকু শিবির সৈনিকেরা অবস্থান নেয় সোহরাওয়ার্দী হল চত্বরে। কিছুক্ষণ পরেই রিভলবার, রামদা, আর চাপাতি নিয়ে স্বশস্ত্র আক্রমণ শুরু করে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। ঈমানের বলে বলীয়ান আল্লাহর সৈনিকরা লাঠিসোটা আর ইটপাথর নিয়েই গড়ে তোলে প্রতিরোধ। তিন তিনবার আক্রমণ করতে আসলেও প্রতিবারই প্রতিহত হয় বাতিলের দল, দৌড়ে গিয়ে আশ্রয় নেয় স্টেশন মসজিদ সংলগ্ন দেয়ালের পাশে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন,
এই আয়াতের সত্যতা সেদিন স্বচক্ষে অবলোকন করেছিল সকলেই। এদিকে শিবিরের ভাইয়েরা প্রতিরোধের পর এগিয়ে এসে অবস্থান নেয় শাহজালাল হল সংলগ্ন পাহাড়ের পাশের রাস্তায়।
দীর্ঘক্ষণ সেখানে ছাত্রশিবিরের অবস্থানের দূর্বলতা নিয়ে নতুন আঙ্গিকে পরিকল্পনা আঁটে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের ক্যাডাররা। নতুন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নং গেইট দিয়ে বিপুল পরিমাণ পুলিশ প্রবেশ করে এবং অবস্থান নেয় শিবির কর্মীদের পিছনে। শিবির কর্মীদের সামনে অস্ত্রধারী ছাত্রলীগ পেছনে সরকার মদদপুষ্ট পেটোয়া (পুলিশ) বাহিনী, ডান পাশে পাহাড় আর বামে কটেজ।
বাতিলের এই চক্রান্ত সেদিন বুঝে উঠতে পারেনি ইসলামী আন্দোলনের ভাইয়েরা। অতর্কিতভাবে পেছন থেকে পুলিশ আক্রমণ চালালে দিগি¦দিক শূন্য হয়ে পড়ে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা। ঠিক সেইসময় পুলিশের সাথে সাথে সামনের দিক থেকে আক্রমণ করে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। শারীরিক আকৃতিতে ছোট আমাদের প্রিয় মুজাহিদ ভাইকে ধরেফেলে তারা, এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে তার মাথায় ও পিঠে। জমিনে লুটিয়ে পড়ল মুজাহিদ ভাই। এদিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ে ছাত্রশিবির সোহরাওয়ার্দী হল শাখার সেক্রেটারী মাসউদ বিন হাবীব ভাই। মুজাহিদের ন্যায় একই কায়দায় চাপাতি ও রামদা দিয়ে আঘাত করে তার মাথায় ও পিঠে। প্রায় মৃত্যু নিশ্চিত করেই যেন ক্ষান্ত হয় তারা। ক্ষণিকের জন্য যেন স্থিমিত হয়ে পড়ে সবকিছু। শান্ত হয়ে যায় পরিবেশ।
মুজাহিদ ও মাসউদ ভাইয়ের ক্ষত-বিক্ষত দেহ পড়ে আছে মাটিতে। চবির সবুজ ঘাস হচ্ছে রক্তে রঙিন।
মুজাহিদ ও মাসউদ ভাইয়ের সহযোগীরা হন্যহারা হয়ে খুঁজছে এম্বুলেন্স। না, তাও পাওয়া গেল না। অবশেষে ভ্যানগাড়ি করে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় চবি মেডিকেলে। ডাক্তারদের অপারগতায় সিএনজি করে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এতক্ষণ মাসউদ ভাই কিছুটা নড়াচড়া করলেও আমাদের প্রিয় মুজাহিদ ভাই হয়ত সবাইকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন ¯্রষ্ঠার সান্নিধ্যে।
বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল এটা কি সেই মাসউদ ভাই! যে কিনা কিছুক্ষণ পূর্বেও ব্যাস্ত ছিল (তুলা ও সেবলন সংরক্ষণ করে) আহত ভাইদের শুশ্রুষায় অথচ তাকে বহনের জন্য এ্যম্বুলেন্স পাওয়া যাচ্ছেনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে। এখানেই কি নির্মমতার শেষ? না! এযেন শুরু মাত্র।
প্রিয় দুজন ভাইকে মৃত্যুপ্রায় দেখে যখন হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল শিবিরের দায়িত্বশীলদের, ঠিক তখনই ছলচাতুরী করে গ্রেফতার করা হয় চবি শিবির সেক্রেটারী ইমরুল হাসান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সহ আরো দশজন ভাইকে।
এদিকে দুইজন ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে মৃত ঘোষণা করে ডাক্তার। প্রতিবাদের লেলিহানশিখা ছড়িয়ে পড়ে পুরো চট্টগ্রাম শহরজুড়ে। প্রতিবাদ থামানোর উপায় হিসেবে একমাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়। াধপপধহ দেওয়া হয় সবগুলো হল।
দ্রুত পোষ্টমর্টেম করে লাশ হস্তান্তুর করলে আন্দোলনের প্রকোপ আরো বেড়ে যাবে এই শংকায় ওয়াসার সাপ্লাইয়ের পানি না থাকার অজুহাত দেখিয়ে পোষ্টমর্টেমের কাজ সম্পন্ন করা হয় পরের দিন সকালে।
প্রিয় দুজন ভাইকে হারিয়ে যখন শোকার্ত শহীদের সহযোগীরা, অপেক্ষা শুধু শেষবারের মত দেখবে প্রিয় দুটি মুখ, জানাজা সম্পন্ন করবে সকলে মিলে, ঠিক সেই সময়ে আওয়ামী মদদপুষ্ট পাষন্ড প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হলো তাও নাকি করতে দেবে না তারা।
শহীদের সহযোগীরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে জানাজার উদ্দেশ্যে ছুটে গেলে পুলিশি আঘাতে প্রতিহত করা হয় তাদের।
অবশেষে সকাল প্রায় ১০.৩০ এর দিকে আমাদের প্রিয় মুজাহিদ ও মাসউদ ভাইয়ের লাশ হস্তান্তর করা হয় (যথাক্রমে) তাদের পিতা ও ভাইয়ের নিকট। লাশের এ্যম্বুলেন্সে শহীদদের স্বজনদের সাথে শামিল হয় আন্দোলনের আরো কিছু ভাই। তবে প্রতিক্ষণেই তাদের পোহাতে হয় পুলিশী হয়রানী।
মাঝখানে শহীদদের লাশ বহনকারী এম্বুলেন্স আর সামনে পিছনে পুলিশী পাহারা। আর একটি থানা এরিয়া পার হলেই নতুন পুলিশ বাহিনী এসে পুনরায় শহীদদের অভিবাভক আর সহযোগীদের জিজ্ঞাসু জেরার মাধ্যমে করে হেস্তনেস্ত । এভাবেই লাশের এম্বুলেন্স পৌঁছে শহীদদের বাড়িতে।
একি নির্মম দৃশ্য অবলোকন করতে হলো এ জাতির। বাকশালী আওয়ামী সরকারের মদদপুষ্ট পেটোয়া বাহিনী একদিকে সহযোগীতা করেছে ছাত্রলীগকে জীবন্ত মানুষ মারতে অন্যদিকে নিরাপত্তা দিচ্ছে সেই লাশের। তাহলে জীবন্ত মানুষ মারতে সহযোগিতা আর সেই লাশের নিরাপত্তা বিধান করাই কি আওয়ামী প্রশাসনের কর্তব্য?
শহীদ মাসউদ বিন হাবীব ভাইয়ের লাশ বাড়িতে পৌছলে হাজারো জনতা সমবেত হয় তার জানাজায়। এইদিকে শহীদ মুজাহিদুল ইসলাম ভাইয়ের লাশ বাড়িতে পৌছলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তার স্বজনেরা। লাশের পাশেই দরজায় দাড়িয়ে পগলের ন্যায় (আমার কলিজা,আমার সোনা....বলে) বিলাপ করছিল মুজাহিদ ভাইয়ের মা। আওয়ামী পেটোয়া বাহিনী সেখানেও করল হস্তক্ষেপ। প্রিয়জন হারানোর শোকে অশ্রূও নাকি ঝরাতে পারবেনা তার স্বজনেরা। তাহলে নাকি জানাজার জন্য আনা লাশ ফেরত নিয়ে যাবে তারা। মুজাহিদ ভাইয়ের বাড়ির প্রবেশ পথে বসানো হল পুলিশ পাহারা। দুর-দুরান্ত থেকে শহীদ কে শেষ বিদায় জানাতে আসা আত্মীয়-স্বজন,বন্ধু-বান্ধব আর সহপাঠি কেউই রেহাই পায়নি তাদের (পুলিশের) হয়রানি থেকে। সকল বাধা-বিপত্তি আর অপমানকে সহ্য করে যখন জানাজায় সমবেত হাজারো জনতা ঠিক তখন শহীদের স্মৃতি রক্ষায় জানাযার ছবি তোলা ক্যামেরা ছিনিয়ে পেটোয়া বাহিনী। সাথে সাথেই উপস্থিত হাজারো জনতা প্রতিবাদ করে উঠে এই নির্মমতার বিরুদ্ধে। ধর্য্যরে বাধ ভেঙ্গে জনতার প্রতিবাদে আর পেরে উঠতে পারেনি তারা। অবশেষে জানাযা শেষে স্বহস্তে কবরে শুয়ে দিয়েছিলাম প্রিয় ভাইটিকে। অন্য একজনের হাত থেকে কোদাল কেড়ে নিয়ে প্রিয় মুজাহিদের কবরে মাটি টেনে নিজের অপরাধ মোচনের চেষ্টা করেছিলাম সেদিন।
কলিজার টুকরো প্রিয় সন্তানকে হারিয়ে ক্ষত-বিক্ষত হৃদয় নিয়ে সন্তান হত্যার বিচারের আশায় সেদিন রাতেই হাটহাজারী থানায় যান শহীদ মুজাহিদের পিতা । বিভিন্ন অজুহাতে রাত দুইটা পর্যন্ত বসিয়ে রাখলেও অবশেষে উপরের নিষেধাজ্ঞা আছে বলে মামলা না নিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হয় শহীদের পিতাকে।
অথচ একি থানা অফিসে রাত চারটায় প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে শহীদ মুজাহিদ ও মাসউদের খুনি ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা, আর শহীদ মুজাহিদকে ছাত্রলীগ কর্মী দাবি করে মামলা দায়ের করে শহীদের সহযোগিদের আসামি করে। সন্তান হারানো পিতার মামলা গ্রহণ না করে বরং খুনিদের করা মামলা গ্রহণ করে তাদেরকে বাঁচানোর পাঁয়তারা কি কোন সভ্য সরকার প্রশাসনের কাজ হতে পারে?
এখানেই যেন নির্মমতার শেষ নয়। থানায় মামলা করতে ব্যার্থ শহীদ মুজাহিদের পিতা মামলা করেন কোর্টে। কোর্ট থেকে মামলা তদন্তের জন্য থানায় পাঠালে তাও নাকচ করে দেয়া হয়। অন্যদিকে বাড়ি দূরে হওয়ায় শাহাদাতের কিছুদিন পর সন্তানের হত্যার বিচারের দাবিতে মামলা করতে থানায় যান শহীদ মাসউদের পিতা। একই আচরণ করা হলো তার সাথেও। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বসিয়ে রেখে উপরের আদেশে মামলা গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করে পুলিশ। শহীদদের দুই পিতা একাদিকবার সাংবাদিক সম্মেলন করে সন্তান হত্যার বিচার চাইলেও সেদিকে কোন কর্ণপাত করেনি আওয়ামী সরকার।
এদিকে খুনীদের দায়ের করা মামলায় দীর্ঘ পাঁচ মাস জেল খেটে আজো হয়রানির শিকার শহীদদের সহযোগীরা। যেই আওয়ামী নিষ্ঠুর পাষন্ডরা কেড়ে নিল দুটি তাজা প্রাণ তারা কি পারবে তাদের ফিরিয়ে দিতে? পারবে কি শহীদ মুজাহিদ ও মাসউদের মত দুটি আদর্শ ও চরিত্রবান মানুষ উপহার দিতে এই সমাজকে? যে মাসউদ বিন হাবীবের রাতের শেষ অংশ কাটত আল্লাহর সিজদায়, যার সালাত-সালাত ডাকে ঘুম ভাংত অনেকরই। যিনি সবাইকে ডাকত সুন্দর নামে, সে ছিল সকলেরই প্রিয়ভাজন। তারা কি পারবে ফিরিয়ে দিতে সেই মুজাহিদকে, যে হাসিমাখা মুখে দ্বীনি আন্দোলনের দাওয়াত দিয়ে বেড়াত সাধারণ শিক্ষার্থীদের, যার শেষ রাতের কান্নায় ঘুম ভেঙে যেত রুমমেটদের।
না! তারা তা পারবে না। তারা পারে শহীদ মুজাহিদ ও মাসউদের ন্যায় যারা নত মস্তিষ্কে আল্লাহকে সিজদা করতে ভালবাসে, সেই মস্তিষ্ককে আঘাতে আঘাতে ছিন্ন-ভিন্নœ করতে, তারা পারে শহীদ মুজাহিদ ও মাসউদের মায়ের ন্যায় অসংখ্য মায়ের কোল খালি করতে।
আসুন এই ইসলাম বিদ্বেষী অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। কোন প্রতিশোধ গ্রহণের মাধ্যমে নয়, শহীদ মুজাহিদ ও মাসউদের রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ আঞ্জাম দিয়ে নিজেকে একজন পরহেজগার মুসলমান এবং সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ার মাধ্যমে। তাহলেই হয়ত শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে এবং পরকালে কঠিন বিচারের দিন ¯্রষ্ঠার নিকট আমাদের জবাবদিহিতা সহজ হবে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে তার সন্তুষ্টি অর্জনের তাওফীক দান করুন। আমিন।

Comments

Popular posts from this blog

বিষয় ভিত্তিক আয়াত-হাদিসঃ মুমিনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য - দাওয়াত - সংগঠন - প্রশিক্ষণ - ইসলামী শিক্ষা - ইসলামী বিপ্লব

বিষয় ভিত্তিক আয়াত-হাদিসঃ মুমিনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য - দাওয়াত - সংগঠন - প্রশিক্ষণ - ইসলামী শিক্ষা - ইসলামী বিপ্লব মুমিনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কুরআন انى وجهت وجهى للذي فطر السموات والارض حنيفا وما انا من المشركين ـ (انعام ـ 79) উচ্চারণ: : ইন্নী ওয়াজজাহাতু ওয়াজহিইয়া লিল্লাযী ফাতরাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানীফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকীন। (১) আমি তো একমুখী হয়ে নিজের লক্ষ্য সেই মহান সত্তার দিকে কেন্দ্রীভূত করছি যিনি যমীন ও আসমানসমূহকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি কনিকালেও মুশরিকদের মধ্যে শামিল নই। (সূরা আনয়াম: ৭৯) قل ان صلاتى ونسكى ومحياي ومماتى لله رب العلمين ـ (انعام :162) উচ্চারণ: : কুল ইন্না ছালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়াইয়া ওযা মামাতী লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন। (২) বল, আমার নামায, আমার যাবতীয় ইবাদত, আমরা জীবন ও মৃত্যু সবকিছুই সারা জাহানের রব আল্লাহরই জন্য। (সূরা আনয়াম: ১৬২) وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون ـ (ذارية ـ 56) উচ্চারণ: : ওয়া মা খলাকতুল জিন্না ওয়াল ইনসা ইল্লা লিইয়া’বুদূন। (৩) আমি জ্বিন ও মানুষকে অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি, কেবল এজন্য সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার বন্

আল-আইয়্যামে ড. ত্বহা হুসায়নের শৈশব জীবন চিত্র

আল-আইয়্যামে ড. ত্বহা হুসায়নের শৈশব জীবন   চিত্র আরবী সাহিত্য জগতে উনিশ শতকের শেষার্ধে মিশরে ডঃ ত্বহা হুসায়নের আবির্ভাব ঘটে ; সে সময় অনুকরণের উষ্ণ হাওয়া বইছিল। নানা প্রকার কুসংস্কারে নিপতিত , বৈদেশিক শাসনের যাতাকলে নিষ্পেষিত , ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য ও বাক স্বাধীনতা , রাজনৈতিক অধিকার , অর্থনৈতিক মূল্যবোধ , মানবিক অধিকার ও সামাজিক মর্যাদা থেকে জাতি বঞ্চিত অবহেলিত , ঠিক তখন এ লাঞ্ছিত , উৎপীড়িত দিশেহারা জাতিকে পথ নির্দেশনার জন্যই ছিল তাঁর সাহিত্যকর্ম । তাঁর ক্ষুরধার লিখনীতে তন্দ্রাচ্ছন্ন জাতির সুপ্তপ্রাণে বিপ্লবের জোয়ার এসেছিল। তিনি ছিলেন একাধারে শিক্ষাবিদ , সংস্কারক , গবেষক , ঐতিহাসিক , বিজ্ঞানধর্মী সমালোচক , প্রভাবশালী বাগ্নী , সর্বোপরি আধুনিক মিশর ও আধুনিক আরবী সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা।১ The New Encyclopaedia Britannica তে বলা হয়েছে “Taha Hussain, was an outstanding Figure of the Modernist movement in Egyptian literature.” 2  ডঃ ত্বহা হুসায়ন রচিত অসংখ্য গ্রন্থাবলীর মধ্যে আল- আইয়্যাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। এটি তিন খন্ডে সমাপ্ত। যার মধ্যে তিনি নিজ জীবনীর বিভিন্ন দিক তু

মনে রাখার সহজ কৌশলে Exclusive টেকনিকে আর্ন্তজাতিক বিষয়াবলী সাধারন জ্ঞান। আশা করি মনোযোগ দিয়ে একবার পড়লেই মনে থাকবে।

মনে রাখার সহজ কৌশলে Exclusive টেকনিকে আর্ন্তজাতিক বিষয়াবলী সাধারন জ্ঞান। আশা করি মনোযোগ দিয়ে একবার পড়লেই মনে থাকবে। SAARC এর সদস্যঃ Exclusive টেকনিকঃ NIPA MBBS পড়তে আগ্রহী। NIPA = নেপাল, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্থান। MBBS= মালদীপ, বাংলাদেশ, ভুটান, শ্রীলংকা। ECO – ভুক্ত শর্টকাট মনে রাখার নিয়মঃ Exclusive টেকনিকঃ আইতু + ৭ স্তান। =আজারবাইজান, ইরান, তুরস্ক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, কাজাখস্তান, কিনঘিজিস্তান, তুর্কিমেনিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান। D-8 ভুক্ত শর্টকাট মনে রাখার নিয়মঃ Exclusive টেকনিকঃ বাপ মা নাই তুমিই সব। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালয়শিয়া, নাইজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, মিসর, ইরান। ASEAN এর সদস্যঃ Exclusive টেকনিকঃ MTV তে FILM দেখলে BCS হবে না। Mayanmar, Thailand, Vietnam, Phillipines, Indonesia, Laos, Malaysia, Brunei, Cambodia, Singapore. Super Seven এর সদস্যঃ Exclusive টেকনিকঃ থামাই+ সিতাদহ থাইল্যান্ড, মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিংগাপুর, তাইওয়ান, দঃ কোরিয়া, হংকং। থাইল্যান্ড, মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া + FOUR TIGERS. Scandinavian States এর সদস্যঃ Exclusive টেকন