Skip to main content

মাহে রামাদান তাকওয়ার মিনার

মাহে রামাদান                                                                                                                              তাকওয়ার মিনার                                                                                                                                          রোজা ইসলামের ৫টি মৌলিক ভিত্তির ১টি অন্যতম ভিত্তি। রোজা ফারসি শব্দ।কোরআনে যাকে সাওম বলা হয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে আত্মসংযম,কঠোর সাধনা,অবিরাম চেষ্টা ও বিরত থাকা। আর ব্যাপক অর্থে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সাওমের নিয়্যাতে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার ও যৌন মিলন থেকে বিরত থাকার নাম সাওম বা রোজা। রোজা সম্পর্কে আল-কোরআন: “হে ঈমানদারগন! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।” (সূরা-বাকারা:১৮৩)                                                    

‘‘কয়েকটি নির্দিষ্ট দিনের রোজা।যদি তোমাদের কেউ অসুস্থ হয় অথবা সফরে থাকে,তাহলে সে অন্য সময় যেন এ দিনের রোজা আদায় করে নেয়। আর যারা রোজা রাখতে সক্ষম (হয়েও রোজা রাখেনা)তারা যেন ফিদইয়া দেয়। আর যে ইচ্ছা করে কিছু বেশি সৎ কাজ করে,তা তার জন্যই ভালো।কিন্তু যদি তোমরা বুঝ তাহলে রোজা রাখাই তোমাদের জন্য বেশি ভালো।’’(সূরা-বাক্বারা:১৮৪)                                            
রোজা ফরজের উদ্দেশ্য:                                                                                                                            রোজা ফরজ হয় রাসূল (স:) এর নবুয়তের ১৫তম বর্ষে তথা ২য় হিজরীতে। রোজা ফরজ করার মূল উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন করা।                                                                                                                             

পূর্ববর্তীদের উপর রোজা ফরজের ইতিহাস:                                                                                                হ যরত আদম (আ:) থেকে শুরু করে হযরত নুহ (আ:) পর্যন্ত প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩,১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখার বিধান ছিল। একে বলা হত ‘আইয়্যামে বীজ’।ইহুদীরা প্রতি সপ্তাহে শনিবার এবং বছরে মহররমের ১০ম তারিখ রোজা রাখতো। মুসা (আ:) তুর পাহাড়ে অবস্থানের ৪০ দিন রোজা পালনের নির্দেশ ছিল। খ্রিষ্টানদের ৫০ দিন রোজা রাখার রেওয়াজ ছিল।উচ্চবর্ণের হিন্দুরা একাদশী উপবাস পালন করে।

রোজার প্রতিদান:                                                                                                                                       হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত।তিনি বলেন,রাসূল (স:) বলেছেন:মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেন,আদম সন্তানের প্রতিটি আমল তার নিজের জন্য,কেবল রোজা ছাড়া। কারণ তা আমার জন্য এবং আমি তার প্রতিদান দেব। আর রোজা ঢাল স্বরুপ। কাজেই তোমাদের কেউ যখন রোজা রাখে,সে যেন অশ্লীল কাজ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় বা তার সাথে ঝগড়া করে তা হলে তার বলা উচিত,আমি রোজাদার। যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ তার কসম!রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের চাইতেও সুগন্ধযুক্ত। রোজাদারের দুইটি আনন্দ,যা সে লাভ করবে। একটি হচ্ছে সে ইফতারির সময় খুশি হয়। আর দ্বিতীয়টি লাভ করবে যখন সে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে ,তখন সে তার রোজার কারণে আনন্দিত হবে। (ইমাম বুখারি ও মুসলিম হাদিছটি বর্ণনা করেন)                                                           

গুনাহ মাফের ঘোষনা:                                                                                                                           হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসূল (স:) বলেছেন,যে লোক রামাদান মাসের সাওম পালন করবে ঈমান ও সাওয়াবের ইচ্ছা পোষন করে,তার আগের সব গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে।(বুখারী)

নিষ্ফলরোজা:                                                                                                                                         হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসূল (স:) বলেছেন,কতক এমন রোজাদার আছে,যাদের রোজা দ্বারা শুধু পিপাসাই লাভ হয়। আর কতক এমন নামাজি আছে,যাদের রাত জেগে নামাজ পড়া দ্বারা শুধু রাত জাগরণই হয়।” (ইবনে মাজাহ) রাসূল (স:) আরও বলেন”যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা এবং কাজ পরিহার করলনা,তার খাদ্য ও পানিয় পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। (বুখারী,তিরমিযী,,আবু দাউদ,্ইবনে মাজাহ ও আহমাদ)

রোজার ফরজ:
 ১।নিয়তকরা।
 ২।সুবহেসাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকা।
 ৩।সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যৌন বাসনা পূরণ থেকে বিরত থাকা।                                      

রোজা ফরজ হওয়ার শর্ত:                                                                                                                          ১। বালেগ হওয়া।                                                                                                                                        ২। মুসলিম হওয়া।
 ৩। রোজা পালনে অক্ষম না হওয়া।

 রোজা ভঙ্গের কারণ এবং যে কারণে শুধু কাযা রোজা রাখতে হয়:
১। কুলি করার সময় হঠাৎ গলার ভেতর পানি চলে গেলে।
২। বলপূর্বক গলার ভেতর কোন কিছু ঢেলে দিলে।
৩। নাকে বা কানে ওষধ ঢেলে দিলে।
৪। ইচ্ছা করে মূখভর্তি বমি করলে।
৫। কাঁকর,মাটি,কাঠের টুকরা ইত্যাদি অখাদ্য খেলে।
৬। পায়খানার রাস্তায় পিচকিারী দিলে।
৭। পেটে বা মস্তিস্কে ওষধ লাগানোর ফলে তার তেজ যদি উদর বা মসিÍস্কে প্রবেশ করলে।
 ৮। নিদ্রাবস্থায় পেটের ভেতর কিছু ঢুকালে।
৯। রাত আছে মনে করে অথবা সূর্য ডুবে গেছে মনে করে কিছু খেলে।
১০। মুখে বমি আসার পর তা পুনরায় গিলে ফেললে।
১১। দাঁত থেকে ছোলা পরিমাণ কিছু বের করে তা গিলে ফেললে।
১২। জবরদস্তিমূলক সঙ্গম করলে।

যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয়না:
১। চোখে সুরমা লাগালে।
২। শরীরে তেল লাগালে।
৩। অনিচ্ছাকৃত বমি করলে।
 ৪। থুথু গিলে ফেললে।
৫। দাঁতে আটকে থাকা খাবার ছোলা পরিমাণ হতে কম হলে এবং তা গিলে ফেললে।
৬। মেছওয়াক করলে।
৭। কানের ভিতর পানি ঢুকলে।
 ৮। অনিচ্ছাকৃত ধুলাবালি,মশা,মাছি বা ধুয়া গলার মধ্যে গেলে।
৯। স্বপ্নদোষ হলে।
১০। ভুলবশত পানাহার বা স্ত্রী সঙ্গম করলে।

যে সব কারণে রোজার কাযা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজীব হয়:
১। রোজা রেখে ইচ্ছা করে পানাহার করলে।
২। রোজা রেখে যৌনবাসনা পূরণ করলে।
 ৩। স্বেচ্ছায় দিনের বেলায় সঙ্গম ছাড়া বিকল্প পন্থায় বীর্যপাত করলে।

 রোজার কাফফারা:
১। উপরোক্ত কারণে রোজা ভঙ্গ করলে একটি রোজার জন্য একাধারে ৬০টি রোজা রাখতে হবে এবং যে রোজার কাফফারা দেয়া হবে সে রোজার কাযাও আদায় করতে হবে।সুতরাং একাধারে ৬১টি রোজা রাখতে হবে।
২। একাধারে রোজা রাখাতে অক্ষম হলে ৬০ জন মিসকীনকে দুবেলা পেট ভরে খাওয়াতে হবে। ৩। মিসকিনকে খাওয়াতে অক্ষম হলে ১ জন গোলাম আযাদ বা মুক্ত করতে হবে।

যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ:
 ১। যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে যে রোজা রাখলে তার জীবননাশের আশংকা হয় বা তার দূরারোগ্য অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
২। সন্তান সম্ভবা এবং প্রসূতি মাতা ও দুগ্ধপোষ্য সন্তানের বিশেষ ক্ষতির আশংকা থাকলে।
৪। স্ত্রী লোকের ঋতুস্রাব দেখা দিলে,সন্তান প্রসব হলে নিফাসের সময়।
৫। সফর কালে।
 ইত্যাদি কারণে রামাদান মাসে কেউ রোজা না রেখে অন্যসময় তা কাযা আদায় করতে হবে।

হান্নান মারূফ
আরবী বিভাগ
 চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

Comments

Popular posts from this blog

বিষয় ভিত্তিক আয়াত-হাদিসঃ মুমিনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য - দাওয়াত - সংগঠন - প্রশিক্ষণ - ইসলামী শিক্ষা - ইসলামী বিপ্লব

বিষয় ভিত্তিক আয়াত-হাদিসঃ মুমিনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য - দাওয়াত - সংগঠন - প্রশিক্ষণ - ইসলামী শিক্ষা - ইসলামী বিপ্লব মুমিনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কুরআন انى وجهت وجهى للذي فطر السموات والارض حنيفا وما انا من المشركين ـ (انعام ـ 79) উচ্চারণ: : ইন্নী ওয়াজজাহাতু ওয়াজহিইয়া লিল্লাযী ফাতরাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানীফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকীন। (১) আমি তো একমুখী হয়ে নিজের লক্ষ্য সেই মহান সত্তার দিকে কেন্দ্রীভূত করছি যিনি যমীন ও আসমানসমূহকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি কনিকালেও মুশরিকদের মধ্যে শামিল নই। (সূরা আনয়াম: ৭৯) قل ان صلاتى ونسكى ومحياي ومماتى لله رب العلمين ـ (انعام :162) উচ্চারণ: : কুল ইন্না ছালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়াইয়া ওযা মামাতী লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন। (২) বল, আমার নামায, আমার যাবতীয় ইবাদত, আমরা জীবন ও মৃত্যু সবকিছুই সারা জাহানের রব আল্লাহরই জন্য। (সূরা আনয়াম: ১৬২) وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون ـ (ذارية ـ 56) উচ্চারণ: : ওয়া মা খলাকতুল জিন্না ওয়াল ইনসা ইল্লা লিইয়া’বুদূন। (৩) আমি জ্বিন ও মানুষকে অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি, কেবল এজন্য সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার বন্...

মনে রাখার সহজ কৌশলে Exclusive টেকনিকে আর্ন্তজাতিক বিষয়াবলী সাধারন জ্ঞান। আশা করি মনোযোগ দিয়ে একবার পড়লেই মনে থাকবে।

মনে রাখার সহজ কৌশলে Exclusive টেকনিকে আর্ন্তজাতিক বিষয়াবলী সাধারন জ্ঞান। আশা করি মনোযোগ দিয়ে একবার পড়লেই মনে থাকবে। SAARC এর সদস্যঃ Exclusive টেকনিকঃ NIPA MBBS পড়তে আগ্রহী। NIPA = নেপাল, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্থান। MBBS= মালদীপ, বাংলাদেশ, ভুটান, শ্রীলংকা। ECO – ভুক্ত শর্টকাট মনে রাখার নিয়মঃ Exclusive টেকনিকঃ আইতু + ৭ স্তান। =আজারবাইজান, ইরান, তুরস্ক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, কাজাখস্তান, কিনঘিজিস্তান, তুর্কিমেনিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান। D-8 ভুক্ত শর্টকাট মনে রাখার নিয়মঃ Exclusive টেকনিকঃ বাপ মা নাই তুমিই সব। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালয়শিয়া, নাইজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, মিসর, ইরান। ASEAN এর সদস্যঃ Exclusive টেকনিকঃ MTV তে FILM দেখলে BCS হবে না। Mayanmar, Thailand, Vietnam, Phillipines, Indonesia, Laos, Malaysia, Brunei, Cambodia, Singapore. Super Seven এর সদস্যঃ Exclusive টেকনিকঃ থামাই+ সিতাদহ থাইল্যান্ড, মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিংগাপুর, তাইওয়ান, দঃ কোরিয়া, হংকং। থাইল্যান্ড, মালয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া + FOUR TIGERS. Scandinavian States এর সদস্যঃ Exclusive টেকন...

সাইয়েদ কুতুব শহীদের জীবনী

ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপুরুষ সাইয়েদ কুতুব শহীদ জন্ম ও শিক্ষাজীবন সাইয়েদ কুতুবের মূল নাম হলো সাইয়েদ ; কুতুব তার বংশীয় উপাধি। তার পূর্বপুরুষরা আরব উপদ্বীপ থেকে এসে মিসরের উত্তরাঞ্চলে বসবাস শুরু করেন। তার পিতার নাম হাজী ইবরাহীম কুতুব। তিনি চাষাবাদ করতেন। তার মাতার নাম ফাতিমা হোসাইন উসমান , যিনি অত্যন্ত ধার্মিক মহিলা ছিলেন। তারা মোট দুই ভাই এবং তিন বোন ছিলেন। ভাইরা হলেন সাইয়েদ কুতুব এবং মুহাম্মাদ কুতুব। আর বোনেরা হলেন হামিদা কুতুব এবং আমিনা কুতুব। পঞ্চম বোনের নাম জানা যায়নি। সাইয়েদ কুতুব ছিলেন সবার বড়। তারা সব ভাই-বোনই উচ্চশিক্ষা লাভ করেন এবং ইসলামী আন্দোলনের জন্য প্রভূত ত্যাগ স্বীকার করেন। সাইয়েদ কুতুব ১৯০৬ সালে মিসরের উসইউত জিলার মুশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার আম্মা ফাতিমা হোসাইন উসমান অত্যন্ত দ্বীনদার ও আল্লাহভীরু মহিলা ছিলেন। সাইয়েদের পিতা হাজী ইবরাহীম চাষাবাদ করতেন কিন্তু তিনিও ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ও চরিত্রবান। কর্মজীবন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাইয়েদ কুতুবের শিক্ষা শুরু হয়। মায়ের ইচ্ছানুসারে তিনি শৈশবেই কোরআন হেফয করেন। পরবর্তীকালে তার পিতা কায়রো ...